বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্য বিজেপিতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে দ্বন্দ। সেই দ্বন্দ্বের আবহেই দু’দিনের বঙ্গ সফরে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ জায়গাও ঘুরে দেখবেন তিনি। এদিকে, এই মুহূর্তে সিকিমে রয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই সিকিমে যান দিলীপ ঘোষ। কিন্তু কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বৈঠকে উপস্থিত থাকার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব। দিলীপকে অভিমান ভুলে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ৮ জুন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে বিজেপির কার্যকারিণী বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দিলীপ ঘোষকে বার্তা দিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এখন প্রশ্ন, দিলীপ ঘোষ আসবেন কী?
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা পাওয়ার পর, আজ দুপুরেই সিকিম থেকে কলকাতায় ফিরছেন দিলীপ ঘোষ। এরপর রাতেই বিমানবন্দরে জে পি নাড্ডাকে স্বাগত জানাতে যেতে পারেন। সূত্রের খবর, অভিমান ভুলে দিলীপ ঘোষ চলে এলে রাজ্য সফরে আসা জে পি নাড্ডার সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হতে পারে। তেমনটা হলে, তাঁকে পাঠানো কড়া চিঠির পর, এটাই প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হবে দিলীপ-নাড্ডা। উল্লেখ্য, আজ রাতেই কলকাতায় আসছেন জে পি নাড্ডা।
সূত্রের খবর, অভিমানী দিলীপ যদি নাড্ডার বৈঠক বয়কট করেন, তাহলে বিজেপি নেতারা অস্বস্তিতে পড়তে পারেন, স্বয়ং নাড্ডাও অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। কারণ নাড্ডার নির্দেশেই দিলীপকে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলার এবং দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু না বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নাড্ডার বৈঠকে দিলীপ অনুপস্থিত থাকলে, ফের আলোচনা শুরু হয়ে যাবে। দলে এমনিতেই সমস্যার শেষ নেই, এমনটা হলে বিদ্রোহ আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বিতর্কের কোনও সুযোগ না দিয়েই ৮ জুন হতে চলা বৈঠকে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে দলের রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে উপস্থিত থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে দিলীপ ঘোষকে।
রাজ্য বিজেপিতে ভাঙন অব্যাহত। বিশেষত, ২০২১ সালের পর থেকে রাজ্য বিজেপির বেহাল অবস্থা। দলের অভ্যন্তরে কোন্দল যেন কিছুতেই থামতে চাইছে না। সেই সঙ্গে একের পর এক নেতা থেকে দলীয় কর্মী দল ছাড়ছেন। সম্প্রতি দলীয় নেতৃত্বের একাংশের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছেন অর্জুন সিং। আবার রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে চড়বৃত্তির অভিযোগ তুলেছেন। আবার সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। দলের এই অস্থির পরিস্থিতিতে জে পি নাড্ডার এই সফরকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাছাড়া ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপিকে ফের চাঙ্গা করতে এবং শক্তিশালী করতে চাইছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
এবার জেনে নেওয়া যাক, দু’দিনের রাজ্য সফরে কী কর্মসূচি রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির? বিজেপি সূত্রে খবর, এবার সফরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে নাড্ডার। জানা গিয়েছে, ৭ জুন সন্ধের সময় কলকাতায় আসবেন জে পি নাড্ডা। এরপর ৮ এবং ৯ জুন রাজ্যে থাকবেন। ৮ জুন বুধবার সকালে বঙ্কিমচন্দ্র ও রাসবিহারী বসুর বাড়িতে যাবেন জে পি নাড্ডা। বুধবার সকালে ১১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ চুঁচুড়ায় বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত ‘বন্দেমাতরম’ ভবনে যাবেন। বন্দে মাতরম ভবন পরিদর্শন সেরে সেখান থেকেই চন্দননগরের রাসবিহারী বোস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে যাবেন তিনি। এরপর ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিজেপির বৈঠক রয়েছে। এই বৈঠকে বিজেপির রাজ্যকমিটির সকল সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এরপর ৯ জুন, বৃহস্পতিবার সকালে বেলুর মঠে যাবেন। পরে রাজ্যে দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। জানা গিয়েছে, দুপুরে বিজেপির ৪২ টি সাংগঠনিক জেলার সমস্ত মন্ডল সভাপতিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। সায়েন্স সিটিতে দুপুর ২ টোয় সভায় বক্তব্য রাখবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বিকেল নরেন্দ্র মোদী সরকারের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে চারটে নাগাদ কলা মন্দিরে সম্মেলনে যোগ দেবেন জে পি নাড্ডা। উল্লেখ্য, রাজ্যে সামনেই রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে এই সফরে নাড্ডা কী বার্তা দেন দলীয় কর্মীদের, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
আপনার মতামত লিখুন :