শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মাদক পাচার মামলায় জেলবন্দী অভিযুক্ত প্রেমিক, আদালতে এসে ‍‍`উড়ন্ত চুম্বন‍‍` ছুঁড়লেন ফরাসি প্রেমিকা

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২২, ১১:১৫ পিএম | আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০৫:১৫ এএম

মাদক পাচার মামলায় জেলবন্দী অভিযুক্ত প্রেমিক, আদালতে এসে ‍‍`উড়ন্ত চুম্বন‍‍` ছুঁড়লেন ফরাসি প্রেমিকা
মাদক পাচার মামলায় জেলবন্দী অভিযুক্ত প্রেমিক, আদালতে এসে ‍‍`উড়ন্ত চুম্বন‍‍` ছুঁড়লেন ফরাসি প্রেমিকা

স্বর্ণকেশী তরুণী। কালো প্রিজন ভ্যানের লোহার জাল আটকানো একটা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে উড়ন্ত চুম্বন (flying kiss) ছুঁড়ে দিচ্ছেন। যার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন তাঁকে দেখা যাচ্ছে না লোহার জালের পিছনে অন্ধকারে। বাঙালি প্রেমিক মাদক মামলায় জেলে। আদালতে এসে তাঁকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ফরাসি প্রেমিকা। প্রেমিক কৌস্তভ বিশ্বাসকে লকআপ থেকে বের হতে দেখেই তাঁকে উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিলেন বিদেশিনী প্রেমিকা কাইলা। চিৎকার করে বললেন, “তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়ে বাইরে এসো।” একই সঙ্গে ছেলের জন‌্য আদালতে এসে চোখের জল ফেলছেন মা-ও।

চার বছর আগে রাজস্থানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করতে এসেছিলেন বছর তেইশের সাইলা স্টাসি। বছর খানেক আগে গোয়াতে আলাপ কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কৌস্তভ বিশ্বাসের সঙ্গে। সেই আলাপ আরও ঘনিষ্ঠতায় গড়ায়। ফ্রান্সের মাকসেই শহরের বাসিন্দা কাইলা জানান, গোয়ায় তিনি তাঁর জন্মদিনের পার্টি দিয়েছিলেন। সেখানেই ডিজে হিসাবে তাঁর পরিচয় হয় কৌস্তভের সঙ্গে। ক্রমে তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। যদিও বুঝতে পারেননি যে, গোয়ায় ছেলেটি গিয়েছিল মাদক কেনাবেচা করতে। 

ক্রমে কাইলা প্রেমিক কৌস্তভের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতায়। বাড়িতে ছেলের সঙ্গে ফরাসী কাইলার লিভ টুগেদারে আপত্তি জানাননি অভিভাবকরাও। কাইলা জানান, ক্রমে তিনি বুঝতে পারেন যে, প্রেমিক কৌস্তভ ডার্ক ওয়েবে অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসছে এলএসডি, এমডিএমএ-র মতো বিদেশি মাদক। বিভিন্ন হোয়াটসঅ‌্যাপ গ্রুপের মাধ‌্যমে খদ্দেরদের কাছে সেই মাদক বিক্রি করে টাকা রোজগার করছে। কাইলার দাবি, তিনি কৌস্তভকে বারণ করতেন। কিন্তু কানে তুলতেন না কৌস্তভ।

গত ২৫ আগস্ট পূর্ব কলকাতার তিলজলার পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা কৌস্তভকে বিদেশি মাদক এলএসডি ও এমডিএমএ-সহ গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। তার মা জানান, বাড়ির নিচে মাদক বিক্রির সময়ই তাঁদের ছেলেকে হাতেনাতে ধরা হয়। অথচ ছেলে এই ধরনের মাদক বিক্রি করে, তা জানতেন না তিনি বা তাঁর স্বামী। তাঁর স্বামী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বিগড়ে যায় ছেলে। ডিস্কো জকির কাজ শুরু করে। সেই সূত্র ধরেই বছর চারেক আগে গোয়া যায়।

কৌস্তভের গ্রেফতারির খবর পৌঁছয় সাইলার কাছেও। তারপরই  হঠাৎ কলকাতায় পৌঁছন তিনি। প্রেমিক গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তিনি ফিরে যাননি দেশে। বরং প্রেমিকের মা-বাবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। সটান চলে যান কৌস্তভের পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে। সেখানে আছেন কৌস্তভের মা পাপড়ি দেবী এবং কৌস্তভের শয্যাশায়ী বাবা বিমান বিশ্বাস। তারপর থেকে এই বিদেশিনীর ঠিকানা কৌস্তভের বাড়ি। শিখে নিয়েছেন অল্প বাংলাও। নিজেই আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন এনজিওর কর্মী কাইলা। প্রায়ই আসছেন ব‌্যাঙ্কশাল আদালতে। শুক্রবার আদালতেও এসেছেন পাপড়ির দেবীর সঙ্গে এসেছেন কৌস্তভের সঙ্গে দেখা করতে। 

আর পাঁচ জনের মতো নিজের ছেলেকে আদৌও নির্দোষ বলতে রাজি নন পাপড়ি দেবী। স্বামী ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। তিনি শয্যাশায়ী হওয়ার পর গোটা সংসারের দায়িত্ব পাপড়ির ওপরেই। পাপড়ি দেবী বলেন, “বার বার চেষ্টা করেও ছেলের নেশা কাটাতে পারেননি তাঁরা। কোনও চাকরি বেশিদিন করত না। রিহ্যাব সেন্টারে পাঠিয়েও লাভ হয়নি। এবার জেলে থেকে শাস্তি পাক।”  

কীভাবে প্রেমিককে জামিন করিয়ে বাইরে নিয়ে আসা যায়, সেই পরিকল্পনাই করছেন দিনরাত। আর প্রেমিককে গাড়িতে তোলার সময় বলছেন, “তাড়াতাড়ি ফিরে এসো”। কাইলা জানালেন, এবার তাঁর ভিসা শেষ হয়ে আসছে। মা তাঁর বিমানের টিকিটও পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফ্রান্সে ফিরে যেতে হবে তাঁকে। কিন্তু দেশে ফিরেও সারাক্ষণ খবর নেবেন, কখন ছাড়া পাচ্ছেন প্রেমিক কৌস্তভ। সে ছাড়া পেলেই কাইলা ফের উড়ে আসবেন তাঁর প্রিয় কলকাতায়।