শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

২১ জুলাইয়ের সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন মমতা, ভিড়ের জন্য আগাম ক্ষমাও চাইলেন নেত্রী

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২, ০৭:৫৭ পিএম | আপডেট: জুলাই ২১, ২০২২, ০২:০৪ এএম

২১ জুলাইয়ের সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন মমতা, ভিড়ের জন্য আগাম ক্ষমাও চাইলেন নেত্রী
২১ জুলাইয়ের সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন মমতা, ভিড়ের জন্য আগাম ক্ষমাও চাইলেন নেত্রী

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাত ভোর হলেই, ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ কলকাতায় ধর্মতলার বুকে। করোনা অতিমারীর কারণে গত ২ বছর করা যায়নি ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ। কিন্তু এবার সেই সমাবেশ হচ্ছে পুরনো জায়গা ধর্মতলাতেই। ২১ জুলাইয়ের তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন সারা। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রায় ১ মাস আগে থেকেই। এখন শুধুই কালকের অপেক্ষা। তারপরেই ঐতিহাসিক সেই সমাবেশ হবে ধর্মতলার বুকে। 

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে তৃতীয়বার বাংলার ক্ষমতা এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জয়ের পর প্রথম শহিদ দিবসের সমাবেশ। তাই উত্তেজনা তুঙ্গে। এমনিতেই করোনার কারণে গত ২ বছর ভার্চুয়ালি শহিদ দিবস পালন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এববছর আগের মতোই হচ্ছে সমাবেশ, সেই একই জায়গাতে। তাই এবার ধর্মতলায় আরও বহু মানুষের বেশি ভিড়ের আশায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। চলতি বছরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই সমাবেশের আয়োজন করেছে জোড়াফুল শিবির। কাজেই এই সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোরালো আক্রমণ শানাবেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এদিন তেমনই ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বললেন, একুশের এই মঞ্চ যেমন মা-মাটি-মানুষকে সম্মান জানানোর মঞ্চ, ঠিক সেই ভাবেই কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়েরও মঞ্চ। 

আগামীকাল ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগে রেওয়াজ মেনে বুধবার সভাস্থল পরিদর্শন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার আয়োজন খতিয়ে দেখতে সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের অন্য শীর্ষনেতারা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পুরো ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি সম্পর্কে খোঁজ নেন তৃণমূলনেত্রী। পাশাপাশি নিজেই খতিয়ে দেখেন তৃণমূলের ‘মহা সমাবেশ’-এর প্রস্তুতি।

উল্লেখ্য, প্রতি বছরই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যায় সভাস্থল ঘুরে দেখেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এবারও তার অন্যথা হয়নি। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টা নাগাদ ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে আসেন নেত্রী। যদিও মূল মঞ্চের উপরে বা ব্যাকস্টেজে যাননি মমতা। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের রাস্তাতেই চেয়ার পেতে অরূপ, ফিরহাদ, সুদীপদের সঙ্গে বসে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এরপর তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সকলকে বলব, শান্তভাবে, সুন্দরভাবে, শৃঙ্খলা রেখে মিছিল করে আসতে। তার পর মিটিং শেষে আবার শান্তভাবে বাড়ি ফিরে যেতে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় জোরে চালাবেন না। কোনও জেলায় কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবেন।’

এখানেই শেষ নয়, তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে, আরও বলেন যে, ‘জায়গাটা তো বদলাতে পারব না। কারণ, ঘটনাটা এখানেই ঘটেছিল। তাই এখানেই সভাটা করতে হয়। ৩০ বছর ধরে এটা হয়ে আসছে। কালকের দিনটা শহরবাসীর একটু অসুবিধা হবে। আমি সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একটু ভিড় হবে। আপনারা একটু কষ্ট সহ্য করে নেবেন একটা দিন। আমরা গত দু’বছর কোভিডের জন্য সমাবেশ করতে পারিনি। এ বছর করছি। আপনাদের কোনো অসুবিধা হলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে ধর্মতলার ২১ জুলাইয়ের সভাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঞ্চের চারপাশে ঘুরে দেখে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অভিষেক বলেন, ‘সমাবেশে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের সমাগম হতে পারে। এবার গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অসম থেকেও আসবে তৃণমূল নেতারা।’ এর পাশাপাশি সমাবেশে আসা কর্মীরা যাতে নিরাপদে, ঠিকভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন, তাঁদের কোনরকম অসুবিধা যাতে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই জাতীয় স্তরে শক্তি বাড়াতে কোমর বেঁধেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই বাংলার বাইরে গোয়া, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে সংগঠন গড়ে তুলেছে জোড়াফুল শিবির। বাংলার বাইরে একাধিক রাজ্যে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উঠে এসেছে তৃণমূল। তাই ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এবারের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নেত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। এই সমাবেশে মমতার বার্তা রাজনীতিতে বিশেষতাৎপর্য পূর্ণ হতে চলেছে। আর এদিন তো সভাস্থল খতিয়ে দেখে, নেত্রী কার্যত স্পষ্ট করে জানিয়েই দিলেন তিনি কেন্দ্রের মোদীর সরকারের স্বেচ্ছাচারিতাকে আক্রমণ করতে চলেছেন।