বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ মেলেনি রক্ষাকবচ। আজ এসএসকেএম হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল যে, অনুব্রত মণ্ডলের ভর্তির প্রয়োজন নেই। এদিকে, আজ হাসপাতাল থেকে বেরোতেই চরম অস্বস্তিতে পড়লেন অনুব্রত মণ্ডল। এদিন এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে তিনি বেরোতেই উঠল ‘গোরুচোর’, ‘গোরুচোর’ চিৎকার। রীতিমতো তাঁর নাম নিয়ে দেওয়া হল স্লোগান। আজ এভাবেই চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে।
গরু পাচার মামলায় আজই নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু তিনি হাজিরা এড়িয়েছেন। নিজাম প্যালেসের পরিবর্তে তিনি যান এসএসকেএম হাসপাতালে। সিবিআই-এর তলবে হাজিরা দিচ্ছেন না অনুব্রত মণ্ডল। একটি ইমেল মারফত অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এই কথা গতকালই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। আজই তাঁর হাসপাতালে যাওয়ার কথা। তাই তিনি যেতে পারবেন না। একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে বীরভূমের এই দাপুটে নেতার। সেই কারণে মেডিক্যাল চেকআপের প্রয়োজন রয়েছে তৃণমূলের এই নেতার। এমনটাই জানিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী। অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই-এর কাছে সময় চেয়েছিলেন।
কিন্তু আজ এসএসকেএম হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অনুব্রত মণ্ডলের ভর্তির প্রয়োজন নেই। আজই তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল নিজাম প্যালেসে। গরু পাচার মামলায় তাঁকে তলব করেছিল সিবিআই। কিন্তু তিনি নিজাম প্যালেসে না গিয়ে আজই এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে যান। আজ সাড়ে ১২ টার কিছু আগে এসএসকেএম হাসপাতালে যান বীরভূমের এই দাপুটে তৃণমূল নেতা। তাঁর জন্য উডবার্নের ২১৬ নম্বর কেবিন বরাদ্দ করা হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর ছিল।
জানা গিয়েছে, বীরভূমের এই দাপুটে নেতার ফিসচুলা ধরা পড়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর মাথার পিছনে ও ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে। এছাড়া তাঁর কাশিও রয়েছে। সব মিলিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলেই সিবিআইকে ইমেল মারফত জানানো হয়েছিল এবং হাজিরার জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল। এদিকে, আজ তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন ৭ জন চিকিৎসক। চিকিৎসকদের সেই দলে ছিলেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, কার্ডিও বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল, চেস্ট বিভাগের চিকিৎসক সোমনাথ কুণ্ডু, ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক দিলীপ পাল, এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসক শুভঙ্কর চৌধুরি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক। সবরকম পরীক্ষার পর জানিয়ে দেওয়া হয় যে, একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকলেও, ভর্তির প্রয়োজন নেই।
এদিকে, আজ স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতেই তৃণমূলের এই দাপুটে নেতাকে দেখেই ওঠে ‘গোরুচোর’, ‘গোরুচোর’ রব। প্রথমে সেখানে উপস্থিত এক রোগীর আত্মীয়ের মুখে শোনা যায়, তাঁকে গাছে বেঁধে ঠেঙানির কথাও। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম নাসির ওরফে বাপ্পা। তাঁর বাড়ি হাওড়ায়। কেন তিনি এমন বললেন? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘গ্রামে কোনও গোরুচোর ধরলে, পঞ্চায়েত প্রধান বা সদস্যরা যেভাবে বিচার করে, তাকে ধরে গাছের গোড়ায় বাঁধে কিংবা লাঠি দিয়ে মারে! ওনাকেও এরকম করা উচিত। এরকম করলেই বুঝতে পারবে, আমি কতটা গোরুচোর! কীভাবে গোরু চুরি করেছি! জনসাধারণের টাকা নিয়ে...সবাই চোর।` এখানেই শেষ নয়, আরও আছে, রীতিমতো শাস্তির নিদানও বলে দেন নাসির। বলেন,‘ধরতে পারলে জনসাধারণের যেরকম বিচার হয়, ন্যাড়া করে ছেড়ে দেওয়া হয়, লাঠি দিয়ে মারা হয়, সেই বিচারটাই ওনাদের চাই। তাহলেই বুঝবে।’ এরপর হাসপাতাল চত্বরে থাকা জনতা স্লোগান দেয় ‘গোরুচোর’ বলে।
অন্যদিকে, এদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও নিজাম প্যালেসে যাননি অনুব্রত। সূত্রের খবর, আবারও ডাকা হতে পারে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে শীঘ্রই। এদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই-এর তলব নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘সংবাদমাধ্যম থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে CBI-ED-র হাতে যা তথ্যপ্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে ওঁর জন্য খাঁচা তৈরিই আছে।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়লা এবং গোরু পাচার মামলায় যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছেন সিবিআই এবং ইডি-র আধিকারিকরা। বীরভূমের একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের এক ঘনিষ্ঠ অনুচরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ১৭ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১০ টি মোবাইল-সহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। অনুব্রত মণ্ডলের জেলার এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও হানা দেয় দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বলে পরিচিত পাথর ব্যবসায়ী টুলু মণ্ডলের বাড়িতে একসঙ্গে তল্লাশি চালায় ইডি ও সিবিআই। অভিযোগ, গরু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত এই টুলু মণ্ডল। সেই তল্লাশি অভিযানেও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকেও গোরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই এবার প্রাপ্ত সব নথির উপর ভিত্তি করেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।
আপনার মতামত লিখুন :