বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ জন্মের মুহূর্তে এক নবজাতক হারাল তাঁর বাবা-মা এবং দিদিকে। কিন্তু মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সে নিজে প্রাণ পেল। কথায় বলে, রাখে হরি তো মারে কে! এই প্রবাদবাক্যই যেন ফের একবার সত্যি প্রমাণিত হল বাংলাদেশে।
শনিবার এক পথ দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বার পেটে থাকা সন্তান বেরিয়ে আসে। জন্ম হয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। কিন্তু ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালেন ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, তাঁর স্বামী এবং ৫ বছরের আর এক কন্যা সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর ৩ টে নাগাদ এমনই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার এক বেসরকারি ক্লিনিক থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে বেরিয়ে স্বামী- স্ত্রী এবং তাঁদের এক মেয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। সেই সময় আচমকাই এক ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই তিনজনকে ধাক্কা মারে। এর জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের। কিন্তু বরাত জোরে ঘটনাস্থলেই ওই অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের পেটে থাকা নবজাতক শিশু চাপ খেয়ে পেট থেকে বেরিয়ে আসে। এই দুর্ঘটনায় নবজাতকের একটি হাত ভাঙলেও সুস্থ রয়েছে সে।
জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গির আলম, বয়স ৪২ বছর। তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৩৫) এবং মেয়ের নাম সনজিদা, বয়স ৫ বছর। জানা গিয়েছে, ত্রিশাল পুর এলাকার বেসরকারি ক্লিনিকে এসেছিলেন জাহাঙ্গির আলম তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে, সঙ্গে তাঁদের আরও এক বছর পাঁচেকের মেয়েও ছিল। ফেরার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার করার সময়ই দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাক তাঁদের ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। কিন্তু এই ঘটনায় জাহাঙ্গির আলমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটের শিশুর জন্ম হয় ঘটনাস্থলেই। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির হাত ভাঙলেও, সে সুস্থই আছে।
অন্যদিকে, ত্রিশাল থানার পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক এই দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন যে, ‘নিহত স্বামী তাদের পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাঁদের চাপা দেওয়ায় ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান মারা যায়।’
এদিকে, রায়মনি ফকিরবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ওই তিনজনের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছলে এলাকায় নামে শোকের ছায়া। নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সাজানো একটি সংসার শেষ হয়ে গেল। সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ। নিহত জাহাঙ্গীরের ভাই জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির তিন সন্তান। বাড়িতে রয়েছে বড় মেয়ে জান্নাত, তার বয়স ১১। আর ছেলে এবাদতের বয়স ৮ বছর। এখন বাবা-মাকে হারিয়ে কীভাবে তারা মানুষ হবে, সেই চিন্তা পরিবার থেকে প্রতিবেশী সকলের।
আপনার মতামত লিখুন :