শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

‘গরিব হতে পারি, ১০ হাজার টাকায় নিজেকে বিক্রি করব না’! বন্ধুকে মেসেজ করেছিলেন অঙ্কিতা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ১১:১৫ এএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ০৫:১৫ পিএম

‘গরিব হতে পারি, ১০ হাজার টাকায় নিজেকে বিক্রি করব না’! বন্ধুকে মেসেজ করেছিলেন অঙ্কিতা
‘গরিব হতে পারি, ১০ হাজার টাকায় নিজেকে বিক্রি করব না’! বন্ধুকে মেসেজ করেছিলেন অঙ্কিতা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ১৯ বছরের তরুণী রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভান্ডারি খুনে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে পুলিশের হাতে। তাঁকে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে যে অভিযোগ সামনে আসছিল, সেই অভিযোগই আরও স্পষ্ট হল অঙ্কিতার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে। পুলিশ জানতে পেরেছে যে, অঙ্কিতা তাঁর এক বন্ধুকে এমনই জানিয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে। তিনি তাঁর বন্ধুকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে দেহ ব্যবসার দিকে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।

বন্ধুকে মেসেজ করে জানিয়েছিলেন, ‘আমি গরিব হতে পারি। কিন্তু মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করতে পারব না।’ মৃত্যুর আগে নিজের বন্ধুকে এমনটাই মেসেজ করে জানিয়েছিলেন ১৯ বছরের তরুণী অঙ্কিতা। এই অঙ্কিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল উত্তরাখণ্ড। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। জোট দিন যাচ্ছে, তদন্ত যতো এগোচ্ছে, ততোই বিজেপি নেতার ছেলে তথা অঙ্কিতা খুনে মূল অভিযুক্ত পুলকিত আর্যর একের পর এক কুকীর্তি সামনে আসছে।

ঘটনার সূত্রপাত এক সপ্তাহ আগে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ডের কাছে হৃষীকেশের কাছে বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যর ছেলে পুলকিত আর্যর রিসর্টে কর্মরত বছর ১৯-এর তরুণী রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভান্ডারি নিখোঁজ হয়ে যান। কাজে না যাওয়ার পরই মূল অভিযুক্ত পুলকিত ওই তরুণীর খোঁজ-খবর শুরু করে এবং নিজে থেকেই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরে তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। প্রথম থেকেই তরুণীর পরিবারের সন্দেহ ছিল পুলকিতের উপরে। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে যে, বিজেপি নেতার ছেলেই ওই তরুণীকে খুন করেছে। অভিযোগ ওঠে, পুলকিত ওই তরুণীকে যৌনতার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই খুন করা হয় তাঁকে। পুলিশও প্রথম দিকে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই যুবতীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এবং পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। রিসর্টে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। রিসর্টের ম্যানেজার সৌরভ ভাস্কর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অঙ্কিত গুপ্তা খুনে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ। তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুন করে দেহ চিল্লা খালে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে পুলকিত ইতিমধ্যেই। ওই তিনজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি অঙ্কিতার দেহের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। অবশেষে গতকাল হৃষিকেশের একটি খালের ধার থেকে অঙ্কিতার দেহ উদ্ধার হয়। ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের একটি আদালত।

বছর ১৯-এর অঙ্কিতা ভান্ডারিকে খুনের প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে, ওই অভিযুক্তের রিসর্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে শুক্রবার রাতেই বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলকিতের হৃষীকেশের ভানাতারা রিসর্ট। পুলিশের দাবি, বিজেপি নেতার ছেলের ওই রিসর্টে বেআইনি কাজ হতো। পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে যে, অঙ্কিতার মতোই রিসর্টের অন্যান্য মহিলা কর্মীদের বাধ্য করা হত, সেখানে আগত অতিথিদের ‘স্পেশাল সার্ভিস’ দিতে। অঙ্কিতাকেও পুলকিত রিসর্টের পুরুষ অতিথিদের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। কিন্তু অঙ্কিতা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। পুলকিতের ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ে নিজের এক বান্ধবীকে তিনি মেসেজ করেন, ‘আমি গরিব হতে পারি, কিন্তু মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করে দিতে পারব না।’

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৮ সেপ্টেম্বর, পুলকিত এবং অপর দুই অভিযুক্ত কাজের নাম করে অঙ্কিতাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। নিজেরা খালের ধারে গিয়ে মদ্যপান করে। এরপরই অঙ্কিতার সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। ওই রিসর্টে কুকর্মের কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অঙ্কিতা। রাগে তিনজন মিলে অঙ্কিতাকে আঘাত করে খালের জলে ফেলে দেয়। ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে অঙ্কিতার। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জলে ডুবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অঙ্কিতার। মৃত্যুর আগে দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অঙ্কিতাকে খুনের কথা ধৃতরা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত পুলকিত আর্যর বাবা বিনোদ আর্যকেও দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি।

এক টুইট বার্তায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে ব্যথিত। তিনি আরও বলেন, ‘দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে পুলিশের ডিআইজিপি-র নেতৃত্বে একটি সিট গঠন করা হয়েছে এবং এই বিষয়টিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা রিসর্টগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।