শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

হিজাব নিয়ে পৃথক রায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির! মামলা পাঠানো হল উচ্চতর বেঞ্চে

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২২, ০১:০৯ পিএম | আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২২, ০৭:২০ পিএম

হিজাব নিয়ে পৃথক রায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির! মামলা পাঠানো হল উচ্চতর বেঞ্চে
হিজাব নিয়ে পৃথক রায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির! মামলা পাঠানো হল উচ্চতর বেঞ্চে

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ হিজাব পরা নিয়ে ভিন্ন রায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির। হিজাব মামলায় কর্ণাটক হাই কোর্টের রায় নিয়ে ঐক্যমতে আসতে পারল না সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আলাদা আলাদা রায় দিলেন দুই বিচারপতি। তাই উচ্চতর বেঞ্চে পাঠানো হল এই মামলা। এই মামলায় বিচারপতি হেমন গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ ‘খণ্ডিত রায়’ দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ কর্ণাটক হাই-কোর্টের রায় বলা হয়েছিল, হিজাব পরাকে ধর্মাচরণের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে দেখা ঠিক নয়। বৃহস্পতিবারের দুই পৃথক রায়ের ফলেই এবার উচ্চতর বেঞ্চে গেল হিজাব মামলা।

এদিন হিজাব মামলায় কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে সঠিক বললেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত। অন্যদিকে, কর্ণাটকের রায়কে খারিজ করলেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া। কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের ধারাবাহিক শুনানির পর ২২ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে নিজেদ্র রায় সংরক্ষিত রেখেছিল ভিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ।

বিচারপতি হেমন গুপ্ত কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের পক্ষে মত জানিয়ে ছাত্রীদের আবেদন খারিজ করে দিলেও, সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার উল্লেখ করে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের যৌক্তিকতা আছে বলেই মেনে নিয়েছেন। হিজাব পড়ার ব্যক্তিগত অধিকারকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি। হিজাব পরার ক্ষেত্রে কর্ণাটক সরকারের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি ধুলিয়া। এর জেরে এই মামলায় হিজাব বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ হল বলা যায়।

এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া কর্ণাটক সরকারের নির্দেশ খারিজ করে বলেন যে, ‘হিজাব পরা-না পরা একটা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। গ্রামীণ ভারতে একটি বাচ্চা মেয়েকে অনেকসময়ই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেকথা মাথায় রেখেই যে প্রশ্নটা আমার মনে এল, তা হল কেন আমরা তার জীবনটাকে আরও কঠিন বানাচ্ছি?’ এই মামলায় দুই বিচারপতির ভিন্ন রায়ের পরই মামলাটি এবার সুপ্রিম কোর্টের ৩ বিচারপতির উচ্চতর বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মামলাটি এখন প্রথমে শুনবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।

উল্লেখ্য, কর্ণাটক হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, হিজাব পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা এবং তা ধর্মীয় অনুশীলনের একটি অপরিহার্য অংশ কিনা তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছ। এর পাশাপাশি কর্ণাটক হাইকোর্টর ৩ বিচারপতির বেঞ্চে এটাও বলা হয় যে, হিজাব বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনও শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য কোনওভাবেই জোর করা যাবে না। কর্ণাটক হাইকোর্টের ১০ ফেব্রুয়ারির সেই অন্তর্বর্তীকালীন রায়কেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মুসলিম পড়ুয়ারা। মুসলিম মেয়েদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, এই মর্মে আবেদন করা হয় দেশের শীর্ষ আদালতে। সেই সঙ্গে কর্ণাটক হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়। 

আসলে, কর্ণাটক সরকার হাইকোর্টে জানিয়েছিল যে, ইসলামে হিজাব অপরিহার্য অঙ্গ নয়। স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ক্লাসরুমে এবং ক্লাস চলাকালীন হিজাব পরা যাবে না। আইন অনুযায়ী, এনিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটা সব ধর্মের পড়ুয়াদের জন্য সমানভাবেই প্রযোজ্য।

প্রসঙ্গত, উদিপি-র এক কলেজে মাথা ঢেকে ক্লাস আসা নিয়েই এই হিজাব বিবাদের সূত্রপাত। ছাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, হিজাব পরে ক্লাসে আসা যাবে না। এটাই সরকারের নির্দেশ। এরপরই কলেজের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান মুসলিম পড়ুয়ারা। বিক্ষোভের জেরে মামলা ওঠে কর্ণাটক হাইকোর্টে।