শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

বিক্ষোভ-ধরনায় ‘না’! ‘অসংসদীয়’ শব্দ বিতর্কের মাঝে সংসদে নয়া নিষেধাজ্ঞা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২, ১২:১৯ পিএম | আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২২, ০৬:১৯ পিএম

বিক্ষোভ-ধরনায় ‘না’! ‘অসংসদীয়’ শব্দ বিতর্কের মাঝে সংসদে নয়া নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভ-ধরনায় ‘না’! ‘অসংসদীয়’ শব্দ বিতর্কের মাঝে সংসদে নয়া নিষেধাজ্ঞা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘অসংসদীয়’ শব্দ বিতর্কের মাঝে এবার সংসদে নয়া নির্দেশিকা জারি হল। সামনেই শুরু হতে চলেছে সংসদের বাদল অধিবেশন। আর সেই বাদল অধিবেশনের সময় সংসদ চত্বরে কোনরকম বিক্ষোভ, ধরনা বা অনশন করা যাবে না। নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে এমনটাই জানিয়ে দিল রাজ্যসভার সচিবালয়। 

রাজ্যসভার সচিব পি সি মুদি এক বিজ্ঞপ্তিতে সাংসদদের উদ্দেশে জানিয়েছেন যে, কোনও সদস্য এরপর থেকে আর সংসদ চত্বরে ধরনা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, অনশন বা কোনরকম ধর্মীয় আচার পালন করতে পারবেন না। পাশাপাশি এক্ষেত্রে সব সদস্যের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, সংসদের এর আগের বেশ কয়েকটি অধিবেশনে দেখা গিয়েছে যে, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে সংসদ ভবনকে ব্যবহার করছে বিরোধীরা। তা সে কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন হোক, সাংসদদের সাসপেনশন হোক বা ইডি- সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরোধীদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার হোক বা মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়। আর এই সব বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে উঠেছে সংসদ ভবন চত্বর। 

বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে যে, এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করে কখন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসেছেন বিরোধীরা। কখনও বিক্ষোভ আবার কখনও অনশন করে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধী সাংসদরা। এটা করার আসল উদ্দেশ্য হল, সংসদ ভবনকে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করলে, সহজেই সাধারণ মানুষের নজর সেদিকে ঘোরানো যায়। কিন্তু এবার বিরোধীদের সেই প্রতিবাদ জানানোর ভাবনাতেই কোপ বসাতে চলেছে সরকার। কেন্দ্র তাঁদের থেকে কেড়ে নিতে চাইছে প্রতিবাদের সেই বড় মঞ্চটিও। 

এদিকে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ টুইট করে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বলেছেন যে, ‘এটা বিশ্বগুরুর নতুন ফরমান। ডরনা (ধরনা) মানা হ্যায়…।’ শুধু জয়রাম রমেশই নন, প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অন্য কংগ্রেস নেতারাও। 

প্রসঙ্গত, সংসদের অধিবেশন শুরু আগেই প্রকাশিত হয়েছে অসাংবিধানিক শব্দের নতুন তালিকা। লোকসভা সচিবালয় কয়েকটি শব্দ সম্বলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। এই বইয়ে থাকা শব্দ লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় ক্ষেত্রেই অসংসদীয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে, ১৮ জুলাই থেকে শুরু হতে চলেছে সংসদের বাদল অধিবেশন। এই নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বাদল অধিবেশন থেকেই। এমনটাই জানা গিয়েছে।

লোকসভার সচিবালয় যে শব্দের তালিকা দিয়েছে তাতে কিছু ইংরেজি শব্দের মধ্যে রয়েছে যেমন- ‘ব্লাডশেড’, ‘ব্লাডি’, ‘বিট্রেইড’, ‘অ্যাশেমড’, ‘অ্যাবিউসড’, ‘চিটেড’, ‘চাইল্ডিশনেস’, ‘কোরাপ্ট’, ‘কাওয়ার্ড’, ‘ক্রমিনাল’ এবং ‘ক্রোকোডাইল টিয়ার’। অন্যদিকে, হিন্দি শব্দের তালিকায় রয়েছে, ‘চামচা’, ‘চামচাগিরি, ‘চেলা’, ‘গদ্দার‍’, ‘গিরগিট’, ‘বেহরি সরকার’ -সহ আরও অনেক শব্দ। এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে, ‘দাঙ্গা’, ‘দালাল’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘কালোবাজারি’, ‘অসত্য’, ‘অহঙ্কার’-এর মতো বিভিন্ন শব্দ। 

এখন প্রশ্ন, কেন এই সিদ্ধান্ত? উত্তর হল, কেন্দ্রের মোদী সরকারের সচিবালয়ের মতে এগুলি ‘অসংসদীয়’ শব্দ। তাই এগুলি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের একটাই বক্তব্য, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার লক্ষ্যেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।