শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে আতঙ্কে কাঁপছে গ্রাম! এলাকা ছাড়ছেন ভীত মুসলিমরা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২২, ১২:২০ পিএম | আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২২, ০৬:২০ পিএম

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে আতঙ্কে কাঁপছে গ্রাম! এলাকা ছাড়ছেন ভীত মুসলিমরা
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে আতঙ্কে কাঁপছে গ্রাম! এলাকা ছাড়ছেন ভীত মুসলিমরা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল গোটা দেশ। দেশের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিনেই বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। বিলকিস বানো-কাণ্ডে গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। সেই সংক্রান্ত মামলায় গতকালই গুজরাত সরকারকে নোটিস পাঠায় দেশের শীর্ষ আদালত। বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষকের মুক্তি নিয়ে গুজরাত সরকারকে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ১১ জন দোষীকে যুক্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২ সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। এদিকে, বিলকিসের ধর্ষকদের প্রত্যাবর্তনে আতঙ্কা কাঁপছে গোটা রন্ধিকপুর গ্রাম। একে একে গ্রাম থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন সেখানকার মুসলিমরা। গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর এবং ওই ১১ জন দোষীদের প্রত্যাবর্তনে ভীত সেখানকার মুসলিমরা। গ্রামের মুসলিমদের দাবি অপরাধীদের ফের জেলবন্দী না করা পর্যন্ত তাঁরা স্বস্তি এবং নিরাপদ অনুভব করছেন না।

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই জেলার কালেক্টরের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই আবেদনপত্রে সই রয়েছে মোট ৫৫ জনের। আবেদনকারীদের আরজি, ওই ১১ জনকে আবারও জেলে ফেরত পাঠানো হোক। এর পাশাপাশি তাঁদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে। আবেদনে এও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তাঁদের এই আরজি পূরণ না হলে, তাঁরা গ্রামে ফিরবেন না।

জানা গিয়েছে, রন্ধিকাপুরের মুসলিম বাসিন্দারা এখন রয়েছেন দেবগড় বারিয়া নামের অন্য এক গ্রামে। বিলকিস বানো এবং তাঁর পরিবারও সেখানেই রয়েছেন। ওই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন যে, তাঁরা কিছুই জানতেন না। ওই ১১ জন গ্রামে ফিরলে তাদের রীতিমতো আতশবাজি ফাটিয়ে, ডিজে বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয়। সেই সময় থেকেই ভীত সেখানকার মুসলিমরা। ওই ব্যক্তির বক্তব্য, ‘খুনি, ধর্ষকদের জন্য কেউ কেন বাজি ফাটিয়ে ডিজে বাজাবে! এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আর এই গ্রামে নয়।’

গ্রামছাড়া মুসলিমদের বক্তব্য, এভাবে অন্য গ্রামে চলে যাওয়ায় তাঁদের জীবনযাপনের পাশাপাশি পেশাগত নানা সমস্যা হচ্ছে ঠিকই, তাও প্রাণ বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছে। গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরই আক্ষেপের সুরে বিলকিস বলেছেন, ‘১৫ অগস্ট বিগত ২০ বছরের আতঙ্ক আবার আমাকে গ্রাস করল, যখন আমি শুনলাম আমার জীবন, আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া ১১টা লোক মুক্তি পেয়ে গেল, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখনও বোবা হয়ে আছি।’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি চলাকালীন ২১ বছর বয়সী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের কন্যাসন্তানকে পাথরে আছড়ে মারে হত্যা করে হামলাকারীরা। এর জেরে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। এখানেই শেষ নয়, তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই ঘৃণ্য অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই- এর বিশেষ আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই মামলায় ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। এদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক ছিলেন, যারা প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়। এদিকে, মেয়াদ ফুরানর আগেই বাকিদের মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার। যা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।