শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

গুজরাট সেতু বিপর্যয়কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১! তল্লাশি অভিযান অব্যাহত

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৯:২৫ এএম | আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৩:২৫ পিএম

গুজরাট সেতু বিপর্যয়কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১! তল্লাশি অভিযান অব্যাহত
গুজরাট সেতু বিপর্যয়কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১! তল্লাশি অভিযান অব্যাহত

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে গেছে মোদীগড় গুজরাটে। রবিবার সন্ধের সময় এই রাজ্যের মোরবি জেলার মচ্ছু নদীতে ভেঙে পড়ে ভু পুরাতন কেবল ব্রিজ। এই দুর্ঘটনায় ক্রমশ বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, অনেকের খোঁজ নেই। দুর্ঘটনার সময় শতাধিক মানুষ ছিলেন ওই ব্রিজে। বেশ কিছু মানুষের নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এখনও চলছে তল্লাশি অভিযান।

এদিকে, গুজরাটের তথ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘এখনও পর্যন্ত ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ জন। এখনও সেনা, নৌসেনা, বিমানবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।’

জানা গিয়েছে যে, গতকাল সন্ধে সাড়ে ৬ টা নাগাদ মচ্ছু নদীর উপর এই ঝুলন্ত ব্রিজ ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে সন্ধে সাড়ে ৭ টা নাগাদ শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ছট পুজো উপলক্ষ্যে মচ্ছু নদীর তীরে যাওয়ার সরু রাস্তায় তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি থাকায় উদ্ধারকারীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লেগে যায়। স্থানীয়রাই প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এর সঙ্গে সেনা, নৌসেনা ও বায়ুসেনাও হাত লাগিয়েছে উদ্ধারকাজে। এই দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের খুঁজতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে মোট ৫ টি দল মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে গুজরাট সরকার। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট সরকার। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, ‘প্রায় ২০০ জন ব্যক্তি উদ্ধারকাজে শামিল হয়েছেন। এখনও নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি চলছে। গোটা ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে খবর, সেতুটি সারানোর কাজ চলছিল। দিন পাঁচেক আগে নতুন করে খুলে দেওয়া হয়েছিল ওই সেতু। আর তারপরই রবিবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে অ্যাম্বুল্যান্স, যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। উল্লেখ্য, মোরবির এই কেবল ব্রিজ বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। গুজরাটে এই সেতু বা ব্রিজ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সম্প্রতি মেরামতের জন্য বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ওধভজি পটেলের মালিকানাধীন ওরেভা গ্রুপকে মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি মেরামত করা হয়েছে। পরে ২৬ অক্টোবর পুনরায় সেতুটি চালু করা হয়।

রবিবার ছটপুজো উপলক্ষ্যে গুজরাটে ছুটি ছিল। তাই সেতুতে অনেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। দুর্ঘটনায় সময়, কমপক্ষে কয়েকশো লোক নিয়ে সেতু ভেঙে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেতু ভেঙে পড়ার আগের এবং পরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিও দেখে আঁতকে উঠছেন মানুষ। সেইসব ভিডিওতে দেখা গিয়েছে সেতু ভেঙে মচ্ছু নদীতে অনেকেই পড়ে যান। তাঁদের মধ্যেই কেউ কেউ সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কেউ আবার ঝুলন্ত ব্রিজের দড়ি ধরে ঝুলছেন। দুর্ঘটনার পর দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে, বর্তমানে গুজরাট সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর মধ্যেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা, স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে যে, অত্যাধিক ওজন নিতে না পারার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে, মেরামতির পরেও কেন এই ব্রিজ ভেঙে পড়ল? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পাশাপাশি বড় দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে।

এই দুর্ঘটনায় শিশু এবং মহিলাদের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুর্ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলের কাছে। সেই সঙ্গে তাঁকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও ইতিমধ্যেই আর্থিক সাহায্যের ঘোষণাও করেছেন। জানা গিয়েছে, আজকের এই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।