বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ভারত সফরে এসেছেন তিব্বতের ধর্মীয় গুরু দলাই লামা। গতকাল, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই জম্মুতে এসে পৌঁছেছেন দলাই লামা। আজ তাঁর লাদাখে যাওয়ার কথা। ভারতের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ-মধুর সম্পর্ক। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু- কাশ্মীরকে দুটি ভিন্ন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার পর এই প্রথম তিনি লাদাখ সফরে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে, দলাই লামার এই ভারত সফর মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছে না প্রতিবেশী দেশ চিন। এই সফর নিয়ে রীতিমতো অসন্তুষ্ট চিন।
তিব্বতীয় ধর্মীয় গুরু দলাই লামাকে নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে চাপানউতোর আজকের নতুন কোনও বিষয় নয়। এর আগে বহুবার দলাই লামার মন্তব্যের সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে চিনকে। তবে, সে সবকে তোয়াক্কা না করেই, দীর্ঘদিন বাদে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন দলাই লামা। শুধু ভারতের মাটিতে পা রাখাই নয়, ভারতে পৌঁছেই চিনের উদ্দেশে কড়া বার্তাও দিয়েছেন দলাই লামা।
চিনে তিব্বতের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে এর আগে দলাই লামা তীব্র বিরোধিতা করলেও, বৃহস্পতিবার জম্মুতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘তিব্বতের পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছি না। তবে, তিব্বতে যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে, তার সংরক্ষণ ও চিনের অধীনে থেকেই তিব্বতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানাচ্ছি।’
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, ‘চিনের সমস্ত বাসিন্দারা নন, তবে, কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি আমায় বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করেন। কিন্তু এখন চিনের নাগরিকরাও বুঝতে পারছেন যে, দলাই লামা স্বাধীনতা নয়, বরং চিনের অধীনে থেকেই তিব্বতীয় বৌদ্ধ সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য স্বায়ত্তশাসন চান।’ গতকাল জম্মুতে পৌঁছানোর পর দলাই লামাকে স্বাগত জানানো হয়। আজ তিনি বিমানে করে লেহ-তে যাবেন। সেখানেই তাঁর একমাস থাকার কথা। এমনটাই জনা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলাই লামাকে তাঁর ৮৭ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা ভালোভাবে নেয়নি চিন। চিনের পক্ষ থেকে ভারতের সমালোচনা করা হয়। শুধু সমালোচনা করাই নয়, চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগও আনা হয়েছিল। অথচ ভারতের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগ করলেও, সেই চিনই ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি ভিন্ন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিল।
এর কয়েকমাস পরেই, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে চিন পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে সেনার সংখ্যা বাড়াতে শুরু করে। ভারতও সীমান্তে তাঁদের সেনা বাড়ায়। এরপর দুই দেশের মধ্যে বচসা এবং পরে সীমান্তে গালওয়ানে দুই দেশের সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এর জেরে ভারতের ২০ জন সেনা প্রাণ হারান। চিনেরও বহু সেনার মৃত্যু হয়। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে একাধিকবার কূটনৈতিক এবং সেনাস্তরে বৈঠক হলেও, সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। এদিকে, আগামী সপ্তাহেই ফের একবার দুই দেশের মধ্যে সেনাস্তরে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে, এই পরিস্থিতিতে দলাই লামার মতো ব্যক্তিত্বের ভারত সফর এবং চিনের প্রতি তাঁর কড়া বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এই সফর চিনকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :