বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের বিশেষ দাওয়াই এবার প্রয়োগ করা হল উত্তরাখণ্ডে। ১৯ বছরের তরুণীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তরাখণ্ডের প্রভাবশালী বিজেপি নেতার ছেলেকে। ওই তরুণী বিজেপি নেতার ছেলের রিসর্টে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইতিমধ্যেই ওই তরুণীকে খুনের অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যের ছেলে পুলকিত আর্যকে। জানা গিয়েছে, পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত খুনের কথা স্বীকার করে নেওয়ার পরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিনোদ আর্যের ছেলে ছাড়াও ওই খুনে রিসর্টের আরও দুজন কর্মী জড়িত। তাঁদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার বিনোদ আর্যের ছেলে পুলকিত আর্যের রিসর্ট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল উত্তরাখণ্ড প্রশাসন।
বছর ১৯-এর অঙ্কিতা ভান্ডারিকে খুনের প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে, ওই অভিযুক্তের রিসর্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে শুক্রবার রাতেই বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলকিতের হৃষীকেশের ভানাতারা রিসর্ট।
মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ মুখ্যসচিব অভিনব কুমার এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযুক্তের রিসর্ট ভেঙে ফেলার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।’ এক টুইট বার্তায় উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে ব্যথিত। তিনি আরও বলেন, ‘দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে পুলিশের ডিআইজি পি রেনুকার নেতৃত্বে একটি সিট গঠন করা হয়েছে এবং এই বিষয়টিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা রিসর্টগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
এদিকে, যমকেশ্বরের বিধায়ক রেণু বিস্ত জানিয়েছেন, তরুণীকে খুনের পর অপরাধীদের মধ্যে ভয় ধরানোর জন্য রিসর্ট ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত একদম ঠিক। পাশাপাশি পুলিশের এক জন এসআই-কে বরখাস্ত করার দাবিও তুলেছেন বিধায়ক রেণু। তাঁর দাবি, অভিযোগ দায়ের করতে যাওয়ার সময় মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ওই এসআই।
প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। ওইদিন থেকেই নিখোঁজ হন ওই তরুণী। পৌরি জেলার একটি রিসর্টে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন বছর ১৯ এর অঙ্কিতা ভান্ডারি। সোমবার কাজে না যাওয়ার পরই মূল অভিযুক্ত পুলকিত ওই তরুণীর খোঁজ-খবর শুরু করে এবং নিজে থেকেই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরে তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকেও নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। প্রথম থেকেই তরুণীর পরিবারের সন্দেহ ছিল পুলকিতের উপরে। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে যে, বিজেপি নেতার ছেলেই ওই তরুণীকে খুন করেছে। অভিযোগ ওঠে, পুলকিত ওই তরুণীকে যৌনতার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই খুন করা হয় তাঁকে। পুলিশও প্রথম দিকে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই যুবতীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এবং পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। রিসর্টে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। রিসর্টের ম্যানেজার সৌরভ ভাস্কর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অঙ্কিত গুপ্তা খুনে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ। তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুন করে দেহ চিল্লা খালে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে পুলকিত।
এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় তিন অভিযুক্ত স্বীকার করেছে যে, তারা ওই তরুণী অঙ্কিতাকে খুন করে, তাঁর দেহ খালে ভাসিয়ে দিয়েছে। সূত্রের দাবি, ওই যুবতীকে জোর করে দেহ ব্যবসায় নামানর চেষ্টা করছিলেন বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত। তা করতে অস্বীকার করাতেই তাঁকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়। দেহের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর আজ, শনিবার পচা-গলা অবস্থায় অঙ্কিতার দেহ উদ্ধার করা হয়। সেটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের একটি আদালত।
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার পরিবার। প্রভাবশালী বিজেপি নেতার ছেলে হওয়ার জন্যই পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলেই অভিযোগ। উল্লেখ্য, পুলকিতের বাবা উত্তরাখণ্ডের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা। একসময় রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন বিনোদ আর্য। এখন মন্ত্রী না হলেও, তাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আবার পুলিকেতের দাদা অঙ্কিত আর্যও বিজেপি নেতা বলেই জানা গিয়েছে। তবে, স্বাভাবিকভাবেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই চরম অস্বস্তিতে বিজেপি।
আপনার মতামত লিখুন :