সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রায় ছ‍‍`শো বছরের প্রাচীন শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা! জানুন এর নানা রোমাঞ্চকর কাহিনী

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২, ০৮:২৯ পিএম | আপডেট: জুলাই ১, ২০২২, ০২:৪৩ এএম

প্রায় ছ‍‍`শো বছরের প্রাচীন শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা! জানুন এর নানা রোমাঞ্চকর কাহিনী
প্রায় ছ‍‍`শো বছরের প্রাচীন শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা! জানুন এর নানা রোমাঞ্চকর কাহিনী

বাংলার প্রাচীনতম ও ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হিসেবে খ্যাত হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ। এই মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে পা রেখেছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। মাহেশকে তিনিই ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। কথিত রয়েছে, চতুর্দশ শতাব্দীতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক ব্যক্তি মাহেশের এই মন্দির প্রতিষ্ঠা। তিনি স্বয়ং জগন্নাথদেবের থেকে এই নির্দেশ পান। আর বর্তমান মন্দিরটি গড়ে ওঠে ১৭৫৫ সাল নাগাদ। কলকাতার পাথুরিঘাটার নিবাসী নয়নচাঁদ মল্লিক এটির প্রতিষ্ঠা করেন।

ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে মাহেশের রথযাত্রা। কথিত রয়েছে, ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী দীর্ঘদিন ধরেই মনের অন্তরে মহাপ্রভুকে ভোগ খাওয়ানোর ইচ্ছে রেখেছিলেন। কিন্তু তাতে বর্থ্য হয়ে তিনি অনশন করে নিজের প্রাণ বিসর্জন করবেন বলে ঠিক করেন। তখনই তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন স্বয়ং জগন্নাথদেব। মাহেশে এসে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি গড়ে ভোগ খাওয়ানোর নির্দেশ দেন।

জগন্নাথদেবের নির্দেশমতো ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করেন। এক বর্ষার দিনে মাহেশের ঘাটে একটি নিমকাঠ ভেসে আসে। বর্তমানে যে ঘাট লক্ষ্মীঘাট নামে পরিচিত। সেই কাঠ জল থেকে তুলে নিজ হাতে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার মুর্তি তৈরি করেন ধ্রুবানন্দ। তারপর জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করেন। তাঁর হাতের ভোগ পেয়ে সন্তুষ্ঠ হন জগন্নাথ। ধ্রুবানন্দেরও মনের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ হয়।

মাহেশে রথযাত্রার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। পুরীর পর দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন রথ হল মাহেশের এই রথ। মাহেশের বর্তমান রথটি প্রায় ১২৯ বছরের পুরনো। জানা যায়, ১৭৫৪ সালে হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণরাম বসু পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট কাঠের রথ তৈরি করেন। সেই  রথ জীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর ১৭৯৮ সালে তাঁরই বংশধর গুরুপ্রসাদ বসু নয় চূড়া বিশিষ্ট নতুন রথ তৈরি করেন। এরপর ১৮৮৪ সালে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রথটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। তখন ওই বসু পরিবারেরই কৃষচন্দ্র বসু ফের এই রথ তৈরির উদ্যোগ নেন। মার্টন বার্ন কোম্পানির দায়িত্বে গড়ে ওঠে এই রথ।

জানা যায়, মাহেশের রথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২০ লক্ষ টাকার মতো। রথটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ওজন ১২৫ টন। ৯টি চূড়া বিশিষ্ট এই রথটিতে মোট ১২টি লোহার চাকা রয়েছে। দুটি তামার ঘোড়া রথটিকে টানে। মাহেশে রথযাত্রার সময় প্রতি বছর ধুমধাম করে মেলা বসে। হাজার-হাজার ভক্তের আগমন ঘটে এই মেলায়। প্রায় ৮ দিন ধরে চলে উৎসব। রথযাত্রার দিন শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দিরে মাসির বাড়িতে যাত্রা করেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। উল্টোরথের দিন তাঁরা ফিরে আসার পর উৎসব শেষ হয়।