তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্ত, তাঁরা দুজনই ছিলেন বিপ্লবী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনে দুজনেই পুড়িয়েছিলেন নিজেদের। তবু দু`জনেরই মন জুড়ে ছিল গভীর ভালোবাসা। যদিও নিয়তির লিখন! পরিণতি পায়নি সেই প্রেম। তবু আদালতের চোরা কুঠুরিতে দাঁড়িয়ে দুজনেই দুজনকে দিয়েছিলেন এক শপথ। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার শপথ।
যে সময়ের কথা হচ্ছে, তখন গোটা দেশের মানুষ উত্তাল স্বাধীনতা সংগ্রামে। তাদের চোখে তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন। এর মধ্যেই ঘটে গেল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন। ধরা পড়লেন আন্দোলনের নেতা, মাস্টার দা সূর্য সেন। তারপরই দলের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলে তারকেশ্বর দস্তিদার। বাকিদের কাছে তিনি তখন ফুটুদা৷
এরপর দিন কয়েকের মধ্যেই রাজদ্রোহের অপরাধে ধরা পড়লেন দলের প্রত্যেকেই। শুরু হল বিচার। আর আদালতের কুঠুরিতে দাঁড়িয়েই ফুটুদা তাঁর মনের কথা জানান কল্পনা দত্তকে। তিনিও তখন বন্দী। কল্পনাকে তিনি জানান, তাকে তাঁর খুব ভালো লাগে। তিনি একসঙ্গে জীবন কাটাতে চান। যদি বেঁচে ফিরে আসেন তাহলে কি কল্পনা অপেক্ষা করবেন তাঁর জন্য? উত্তরে কল্পনা ছিলেন মৌন। কিন্তু সেই মৌনতাতেই যেন ছিল সম্মতি। এই নিয়ে পরে নিজের স্মৃতিকথায় কল্পনা দত্ত লিখেছিলেন, `ধরা পড়ার পর মাস্টারদা, ফুটুদা আর আমাকে নিয়ে নতুন করে মামলা শুরু হয়েছিল। আমরা কাঠগড়ায় একসঙ্গে দাঁড়াতাম। সেইসময় একদিন ফুটুদা বলেছিলেন, তোকে ভালো লাগে। যদি ফিরে আসি, আমার জন্য অপেক্ষা করবি? আমার মৌনতায় হয়তো সম্মতি ছিল।`
কিন্তু নিয়তির এ কি খেলা! ঘরে আর ফেরা হয়নি ফুটুদার। রাখা হয়নি কল্পনাকে দেওয়া কথাও৷ ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মাস্টার দার সঙ্গে ফাঁসি হয় তাঁরও। কল্পনার কপালে জোটে কালাপানির দন্ড। অবশ্য কবিগুরুর দৌলতে কালাপানি আর যেতে হয়নি তাঁকে। এ দেশেই দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দী থাকেন তিনি। একসময় মেলে মুক্তি।
এর প্রায় দশ বছর পর আবার নতুন প্রেমের প্রস্তাব পান কল্পনা দত্ত। নিমেষেই তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যে কথা দিয়েছিলেন ফুটু দাকে। সেই কথা তিনি ভুলবেন কি করে! তাই আর প্রেম এল না তাঁর জীবনেও। অবশেষে দীর্ঘকাল অপেক্ষার পর ১৯৪৪ সালে পি. সি যোশীকে বিয়ে করেন তিনি। তবে আমৃত্যু সঙ্গী হিসাবে থেকে গিয়েছিল ফুটুদার শেখানো ঐতিহ্য এবং আত্মত্যাগের শিক্ষা। সেগুলি নিয়েই নিজের জীবনকালের এক বড় অংশ কাটিয়েছিলেন বীরাঙ্গনা কল্পনা দত্ত।
আপনার মতামত লিখুন :