বর্তমান মোবাইল, কম্পিউটারের যুগে সবাই এখন সেখানেই নিত্যদিনের খবর পড়ে নেয়। ফলে অনেকটাই কমে গেছে খবরের কাগজে সঙ্গে মানুষের সখ্য। কিন্তু এখনও সকালের চায়ের সঙ্গে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়ে গেছে। সমাজ অত্যাধুনিক হলেও এখনও অনেক মানুষ ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়তে বা দেওয়ালের গায়ে ক্যালেন্ডার টাঙিয়ে রাখতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করে।
জানেন কী এই অভ্যাসের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে আঠেরোশো শতক আগে। ১৭৭২সালে ব্রিটিশ রাজত্বে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নিয়ে আসেন বছর বাইশের নাথানিয়েল ব্রাসলে হালেদ। তিনি এই বাংলায় কাজ করতে গিয়ে ক্রমশ বাংলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শেখেন বাংলা ভাষা। হুগলিতে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি সম্পূর্ণ বাংলায় লিখলেন ‘আ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে তাঁর সমস্যা হলো ছাপাখানার হরফ তো ইংরেজিতে। আর এই সমস্যার সমাধান করতে তিনি পাশে পেলেন পঞ্চাননমল্লিক (কর্মকার)কে। আর তবে থেকেই হুগলিতেই শুরু হল ছাপাখানার পথ চলা। এক বছর পর ১৭৭৮সালে প্রকাশিত হল বাংলা হরফে ছাপা প্রথম বইটি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৭৭৭সালে বাংলার ছাপাখানায় প্রথমে কোনও বই নয়, ইংরেজি হরফে ছাপা হয়েছিল একটি ক্যালেন্ডার। আর বাংলা ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ বই লেখন এক সাহেব। জানা যায়, ১৭৭৭ সালে যোহান জাকারিয়া কিয়ের নানডার নামের এক পাদ্রি বাংলার ছাপাখানায় ওই বিশেষ ক্যালেন্ডার তৈরি করতে উৎসাহী ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয় ‘Calendar for the year of our Lord MDCCL XXVIII Calculated to the Meridian of Calcutta’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ওই ক্যালেন্ডারটি ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল।
বাংলা হরফের সঙ্গে এর কোনও যোগাযোগ ছিল না। আর এই সবের মধ্যেই ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্ট হিকি প্রকাশ করেন বাংলার প্রথম সংবাদপত্র।নাম- ‘বেঙ্গল গেজেট’। ব্রিটিশ আধিপত্যে ভারতে রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। ভারতে শুরু হয় খবরের কাগজের পথচলা। রচিত হয় নতুন ইতিহাস। মুদ্রণ শিল্পের পথ চলা তৎকালীন ভারতবর্ষে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :