পদ্ম সম্মানে সম্মানিত হলেন প্রখ্যাত উপজাতি শিল্পী ভুরি বাঈ। তিনি একজন ভিল চিত্রশিল্পী। তিনি মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের সীমান্তে অবস্থিত পিটল গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ভূরি বাই ভারতের বৃহত্তম উপজাতি গোষ্ঠী ভিল সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। মধ্য প্রদেশ সরকারের শিল্পীদের প্রতি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান `শিখর সম্মান` সহ অনেক পুরস্কার তিনি জিতেছেন তিনি। ২০২১ সালে তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হন। পদ্ম সম্মান পেয়ে প্রখ্যাত উপজাতি শিল্পী ভুরি বাঈ অভিভূত হয়ে জানান, “ জীবনের একটা সময় আমি শ্রমিক ছিলাম। আমি শৈশব থেকেই ছবি আঁকছি। কিন্তু শ্রমিক জীবনে প্রথম মালিকের তরফ থেকে প্রথম এল প্রস্তাব। মাটির দেওয়ালে ছবি আঁকার পরিবর্তে তিনি উপদেশ দেন ক্যানভাসে ছবি আঁকুন। আজ আমার আঁকা ছবি বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। এই সম্মান পেয়ে আমরা অভিভূত।” ভূরি বাঈ পিথোরা চিত্রকর্ম তৈরিতে সুদক্ষ।
শৈশবে একজন দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন এই মহিলা শিল্পী ৷ দৈনিক মজুরি ছিল ৬ টাকা। চরম দারিদ্রের সংসারে সেই মজুরি কিছুই ছিল না। তাঁর যখন ১০ বছর বয়স সেই সময় তাঁদের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়৷ ফলে তাঁর পরিবার একেবারে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ে৷ ভূরি বাঈয়ের জীবন হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। আর্থিক দায়ভার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভূরি বাঈয়ের বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার৷ তবে সংগ্রামের শেষ হয়নি৷ এরপরও দীর্ঘদিন তিনি দিন মজুর হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন৷
মধ্য প্রদেশের ঝাবুয়া জেলার ভীল ও রাথওয়া সম্প্রদায় নিজেদের বাড়ির দেওয়ালে পিথোরা চিত্রাঙ্কন করে থাকেন। সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে এই চিত্রশিল্প দেখা যায়৷ তাঁরাই এগিয়ে নিয়ে যান ঐতহ্যবাহী পিথোরা চিত্র। ভূরি বাঈ যখনই অবসর পেয়েছেন, তখনই এই শিল্পের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। ভূরী বাই জানিয়েছেন, তাঁর মা-বাবা অবসর সময়ে প্রাকৃতি থেকে রং ব্যবহার করে দেওয়ালে এই চিত্রকর্ম করতেন৷ ফুল, পাতা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান থেকে এই রং তৈরি করা হত৷ আর বাবা-মাকে দেখে তিনি এই কাজে উৎসাহ পান।
যদিও এই কাজে প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। একজন আদিবাসী মহিলা হয়ে এই চিত্রশিল্পের কাজে যুক্তর বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি৷ সেই সময় নাকি প্রস্তাবও পাস করানো হয় যে কোনও মহিলা এই শিল্পে যুক্ত হতে পারবেন না৷ শুধুমাত্র পুরুষ জাতি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এই ঐতিহ্যকে। কিন্তু শোনেননি ভূরি বাঈ। তাঁকে এই কাজে উৎসাহ দেন যোগেশ স্বামীনাথান। তাঁর একান্ত উৎসাহেই দেওয়াল ছেড়ে ক্যানভাসের উপর আঁকতে শুরু করেন এই মহিলা শিল্পী৷ স্বামীনাথনই তাঁর থেকে ছবি কিনতে শুরু করেন৷ ছবি পিছু ৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক পান ভূরি বাঈ৷ বেঁচে ওঠে একটি মৃতপ্রায় শিল্প। আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান মহিলা শিল্পী। শিখর সম্মান, অহল্যা সম্মান, রানী দুর্গাবতী পুরস্কারের পর পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হলেন এই আদিবাসী মহিলা শিল্পী।
আপনার মতামত লিখুন :