আজ মহালয়া। আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোর বেণু। আজ পিতৃপক্ষের অবসান অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের সমাপ্তি এবং শুক্লপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনার আগের অমাবস্যা। এই দিন কেই মহালয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।মহালয়ার পরের দিন থেকেই সূচনা হবে দেবীপক্ষের। অর্থাৎ মা দুর্গা বাপের বাড়ি আসার কাউনডাউন স্টার্ট।
মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। আর দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয়। পুরাণ মতে, কথিত রয়েছে, মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর ছিলেন অমর। কেবল কোনও নারীশক্তির কাছে পরাজয় নিশ্চিত ছিল৷ অসুরদের অত্যাচারে দেবতারা যখন কূল পাচ্ছেন না, সে সময় ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। তাঁর দশ হাতে উঠল দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র। তা দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন দেবী। এই দিনটিকেই মহালয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে এই দিনের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ হল তর্পণ। এইদিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি রয়েছে। তাই ভোর থেকেই গঙ্গার ঘাটে ঘাটে চলছে পিতৃ তর্পন। আমাবস্যার পুন্য তিথিতে পিতৃপক্ষের উদ্দেশ্যে পুত্রের তর্পণ করা কর্তব্য। সেই মতই সকাল থেকে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে চলছে তর্পণ। এই পরম্পরা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।
এদিন উদ্দেশ্যে গঙ্গায় স্নান করে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন অনেকে। তবে অনেকেই আছেন যারা নদীতেও তর্পণ করেন। তবে করোনার জেরে প্রায় দুবছর মহালয়ার দিন সেভাবে ঘাটে ঘাটে ভিড় দেখা যায়নি বেশি। কিন্তু গত বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় তর্পণ করার ভিড় দেখা গিয়েছিল। আর এবছর তো করোনা পরিস্থিতি আরও অনেকখানি স্বাভাবিক তাই ঘাটে ঘাটে ভিড়ও রয়েছে।
এছাড়া মহালয়ার কথা উঠলেই বাঙালির কানে ভেসে আসে সেই উদাত্ত কণ্ঠ- "আশ্বিনের শারদপ্রাতে জেগে ওঠে আলোকমঞ্জীর"! মহালয়ার দিনে এই কণ্ঠ শুনেই ঘুম ভাঙে বাঙালির৷ আর বাঙালির এই অন্যতম প্রিয় কণ্ঠের অধিকারী হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র! এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বকে ছাড়া যেন মহালয়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মহালয়ার দিন ভোর ভোর উঠে মহালয়া দেখার এক আলাদায় আনন্দ। ছোটো থেকে বড় অনেকেই এদিন ভোরবেলায় বাজি ফাটিয়ে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :