শহরের পুজোর চেয়ে গ্রাম বাংলার পুজো বেশি জাঁকজমক ও আড়ম্বরে হয়ে থাকে। গ্রাম বাংলার পুজো মানেই গ্রামের জমিদার বা রাজবাড়ির পুজোকেই ধরা হয়। তবে বর্তমানে হয়ত আগের মতো অত জাঁকজমক নেই। তবে বংশ পরম্পরায় গ্রামে এখনও অনেক জমিদার বাড়ির পুজো বা রাজবাড়ির পুজো হয়ে চলেছে।
গ্রাম বাংলার পুজোর আলাদায় মজা। আগেকার দিনে জমিদার বাড়ির কিংবা রাজবাড়ির পুজোর আলাদায় আড়ম্বর ছিল। মানুষ পায়ে হেঁটে কিংবা গরুর গাড়ি চেপে একটা গ্রাম থেকে আরেকটা গ্রামে ঠাকুর দেখতে যেত। এছাড়া জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ির ঝালরের আলোর শোভা ছিল নজরকাড়া। আলোর কেরামতি বলতে মানুষ ঝালরের আলোয় জানত।
অন্যদিকে মহালয়া আসার আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত প্রতিমার কাঠামো বানানো। গ্রামের বাধাধরা কুমোরের হাতেই ফুটে উঠতো দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ। যা দেখার জন্য প্রতি বছর মানুষ অধীর আগ্রহে থাকেন। মায়ের মৃন্ময়ী রূপই যেন সবকিছু দুঃখ, কষ্ট দূর করে দেয়। আবার মা আসার সাথে সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ায় শিউলি ফুলের সুগন্ধ।
মা আসার এক অন্য চিত্র ফুটে উঠে গ্রাম বাংলায়। আকাশে বাতাশে পুজোর গন্ধ পাওয়া যায় যেন। গ্রামের আকাশে বাতাসে মায়ের আগমনীর সুর পাওয়া যায় মাঠে কাশ ফুলের শোভাতে। সঙ্গে দীঘির জলের পদ্মফুলের সঙ্গে প্রজাপতির খেলা দেখে ছেলে মেয়েদের হল্লা। আবার জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরে মায়ের চক্ষুদান দেখার জন্য মহালয়ার ভোরে প্রচুর মানুষের ভিড়। তবে এখন মহালয়ার দিন মায়ের চক্ষুদান হলেও হয়ত অত মানুষের ভিড় আর দেখা যায় না।
এছাড়া গ্রাম বাংলার পুজোয় খাবার দাবারের আয়োজনও থাকতো প্রচুর। নানা ধরনের ফল থেকে শুরু করে নানা রকমের মিষ্টি। আবার ব্যবস্থা থাকত কাঙালি ভোজনেরও। পাঁঠার মাংস, পোলাও, মাছের নানান রকম পদ, নানান রকম সবজী সহযোগে ডাল, সাত রকমের ভাজা দিয়ে ভরে থাকত পুজো বাড়ির রান্নাঘর। তবে আগে মত এত আয়োজন হয়ত এখন আর নেই। তবে বংশ পরম্পরায় রীতি মেনে মায়ের আরাধনা হয়ে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :