শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

দেবীর নামাঙ্কিত জমির ফসল বেচে পুজোর আয়োজন! রাজার প্রচলিত পুজোর হাল ধরেছে গ্রামবাসী

মৌসুমী মোদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ০৬:৫৯ পিএম | আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২, ১২:৫৯ এএম

দেবীর নামাঙ্কিত জমির ফসল বেচে পুজোর আয়োজন! রাজার প্রচলিত পুজোর হাল ধরেছে গ্রামবাসী
দেবীর নামাঙ্কিত জমির ফসল বেচে পুজোর আয়োজন! রাজার প্রচলিত পুজোর হাল ধরেছে গ্রামবাসী

চাঁচলরাজ শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল পুজোর। বর্তমানে নেই রাজা, নেই তাঁর রাজত্বও। তবে প্রায় ২০০ বছরের এই পূজার হাল ধরেছেন গ্রামবাসীরা। সারা বছর দেবীর নামাঙ্কিত সম্পত্তির ফসল বিক্রয় করেই পূজিতা হন উত্তর সিংহ পাড়ার দেবী। চণ্ডী রূপে আদ্যাশক্তির আরাধনা হয় মালদহের চাঁচল সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর হারো হাজরা গ্রামে৷

দশভূজা নন, এই দেবী চতুর্ভূজা৷ নাম চতুর্ভুজা চণ্ডী। মালদহের ভাকরী গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর হারো হাজরা গ্রামের এক প্রান্তে রয়েছে প্রাচীন বটগাছ। সেই গাছের পাশেই চতুর্ভূজার মন্দির৷ আর সেই মন্দিরেই পূজিতা হন মা চুতুর্ভূজা চন্ডী। সপ্তমী থেকে দশমী টানা চার দিন ধরে চলে মহা ধুম ধুম সহ করে পুজোপাঠ। নবমীর দিন রয়েছে পাঠাবলির রীতি।

জানা যায়, এই পুজোর শুরু চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরীর হাত ধরে৷ প্রায় ২০০ বছর আগে চরাজা শরৎচন্দ্রের রাজ দরবারে কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন উত্তর হারো হাজরা গ্রামের এক প্রজা নেহাল সিংহ। রাজার জমিদারির কিছুটা অংশ তিনি দেখাশোনা করতেন। ধীরে ধীরে রাজার বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে ওঠেন নেহালবাবু। সেই সময় কোনও এক দুর্গাপুজোর তিথিতে হাতির পিঠে চড়ে রাজা শরৎচন্দ্র উত্তর হারো হাজরা গ্রামে যান৷ সেখানে গিয়ে তিনিই এই পুজোর প্রচলন করে।

সেই শুরু! তারপর থেকে আজও ওই গ্রামে শারদ তিথিতে হয়ে আসছে চণ্ডীর আরাধনা। পুজোর খরচ বহনের জন্য দেবী চণ্ডীর নামে দু’বিঘা জমি দান করেছিলেন রাজা শরৎচন্দ্র৷ সেই জমি থেকে উৎপাদিত ধান, পাট, সর্ষে বিক্রি করেই ওঠে পুজোর খরচ। এখন রাজা কিংবা রাজত্ব কোনওটাই আর নেই৷ তবে গ্রামবাসীদের হাত ধরে রয়ে গিয়েছে এই পুজো৷ দেবীর নামে থাকা সম্পত্তির ফসল বিক্রি করেই এই পুজোর আয়োজন করা হয়৷

শারদ তিথির মহাসপ্তমীতে শুরু হয় মায়ের বাৎসরিক পুজো৷ চলে দশমী পর্যন্ত৷ পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে গমগম করে ওঠে গোটা চত্বর৷ মহানবমীতে ছাগবলি প্রথা চালু রয়েছে এখানে৷ দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজোর রীতি অপরিবর্তিত৷

এই পুজোকে ঘিরে প্রায় ছ’টি গ্রামের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন৷ এলাকার সাত থেকে সত্তরের মনে গেঁথে রয়েছে মহামায়ার চতুর্ভূজা রূপ৷ সপ্তমী থেকে দশমী, চারদিন মহা ধুমধামে চতুর্ভূজা চণ্ডীর পুজো হয়। নবমীতে ছাগবলিতে তৃপ্ত হন মা৷ দশমীর গোধূলি লগ্নে মন্দির লাগোয়া চণ্ডীদিঘীতে দেবী মূর্তির বিসর্জন দেওয়া হয়। বছরের পর বছর এই প্রথাতেই হয়ে আসছে পুজো। যা এখনও অবিচ্ছিন্ন।