নব্বইয়ের দশকে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এক প্রত্যন্ত গ্রামের ভিন্নধর্মী দুই বালকের বন্ধুত্ব এবং চূড়ান্ত বিচ্ছেদের গল্প নিয়ে মুক্তি পেয়েছে `দোস্তজী`। নবীন পরিচালক প্রসূন চট্টপাধ্যায়ের প্রথম ছবি এটি। এই ছবির প্রেক্ষাপট বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও মুম্বই বিস্ফোরণের পরবর্তী সময়। বাংলাদেশের বর্ডারের কাছে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা পলাশ ও সফিকুলকে ঘিয়েই `দোস্তজী` ছবির মূল গল্প।
ছবিতে দুই বন্ধুর একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ, নাম পলাশ ও আরেকজন মুসলমান পড়শি সফিকুল। দুই ক্ষুদে বন্ধুর আড়ি-ভাব, মান-অভিমান, খুনসুটি এবং নীরব ভালোবাসাই `দোস্তজী`র মাধ্যমে ফুটে উঠেছে পর্দায়। ছবিতে পলাশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশিক শেখ এবং সফিকুলের ভূমিকায় রয়েছেন আরিফ শেখ। এছাড়াও রয়েছে আরেক খুদে হাসনাহেনা৷ জীবনের পয়লা সিনেমাতেই অভিনয়ে বাজিমাত করেছে বাংলার এই তিন খুদে শিল্পী। আএবার এই খুদেদের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নিল রঘুনাথগঞ্জের এক স্কুল।
রঘুনাথগঞ্জের এক আবাসিক স্কুল গাইডেন্স একাডেমির তরফে আশিক, আরিফ এবং হাসনাহেনাদের একেবারে বিনামূল্যে পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন। ‘দোস্তজী’ ছবির এই তিন খুদে পড়ুয়াকেই পুরো স্কলারশিপ দিয়ে তাঁদের আবাসিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দিল গাইডেন্স একাডেমি। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় কিংবা দু-মুঠো ভাত জোগাড় করতেই নাভিশ্বাস ওঠে যাদের সংসারে, সেখানে উচ্চশ্রেণীর পড়াশোনা তাদের পক্ষে বিলাসিতা! কারও বাবা পেশায় দিনমজুর, কেউ বা আবার মিস্ত্রির কাজ করেন। তিন পরিবারেই অভাব নিত্যসঙ্গী।
একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের তিনি অভাবী সংসারে খুদেকে দিয়ে ‘দোস্তজী’তে অভিনয় করান প্রসূন। সেখানে ‘দোস্তজী’র পর যেভাবে প্রশংসিত হয়েছে আশিক, আরিফ এবং হাসনাহেনাদের অভিনয়, সেখানে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেটা মাথায় রেখেই রঘুনাথগঞ্জের গাইডেন্স একাডেমির এমন অভিনব উদ্যোগ। সেখানকার আবাসিকে থেকেই দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নিশ্চিন্তে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবেন এই খুদে অভিনেতারা। এটা যে নিঃসন্দেহে এক অভিনব উদ্যোগ তা বলাই বাহুল্য।
পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায় এমন উদ্যোগে বেজায় খুশি। তিনি জানান, “স্কলারশিপের আশা করেছিলাম, কিন্তু পুরোপুরি বিনামূল্যে পড়াশোনার করার যে সুযোগ ওদের দেওয়া হল, সেটা আশাতীত। অসংখ্য ধন্যবাদ গাইডেন্স একাডেমিকে। ওদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক।”
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের তরফে ৮টি পুরস্কার গিয়েছে প্রসূন চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতে। তাছাড়াও ২৬টি দেশে দেখানো হয়েছে এই সিনেমা। এই ছবিতে নেই কোনও বিশেষ আড়ম্বর। তবুও সকলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে `দোস্তজী`। এমনকি বাদ যাননি বলিউড শাহেনশাহও। ছবির জন্য পরিচালককে শুভেচ্ছা জানিয়ে ট্যুইট করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। এই ধরণের ছবি যে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আপনার মতামত লিখুন :