শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বাধ্য হয়ে সেলসের চাকরিও করেছিলেন কেকে! তাঁর প্রেমের গল্পে আপনিও আবেগতাড়িত হয়ে পড়বেন

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২, ০১:৩৫ পিএম | আপডেট: জুন ১, ২০২২, ০৭:৫২ পিএম

বাধ্য হয়ে সেলসের চাকরিও করেছিলেন কেকে! তাঁর প্রেমের গল্পে আপনিও আবেগতাড়িত হয়ে পড়বেন
বাধ্য হয়ে সেলসের চাকরিও করেছিলেন কেকে! তাঁর প্রেমের গল্পে আপনিও আবেগতাড়িত হয়ে পড়বেন

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ একটা নতুন দিন, একটা নতুন সকাল। অথচ সেই সকালে নেই কেকে। যিনি গতকাল পর্যন্ত নিজের সুরের জাদু দিয়ে মাতিয়েছেন অগণিত শ্রোতাকে। গান গেয়ে মঞ্চে আগুন ঝড়িয়েছেন। আজ শুধু তিনিই নেই। আরও কোনও দিন এভাবে মঞ্চ মাতাবেন না তিনি। পড়ে রইল অসংখ্য স্মৃতি আর তাঁর অসাধারণ সব গান। 

কেকে ওরফে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। এক বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, ভারত জোড়া তাঁর খ্যাতি। কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে প্রয়াত হয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে। জীবনের শেষটাও গানের মধ্যে দিয়েই হল। ইহজগত ছেড়ে এক অন্য সুরের জগত মাতাতে পাড়ি দিয়েছেন কেকে। কাকতালীয়ভাবে কাল নজরুল মঞ্চে কেকে’র শেষ গান ছিল তাঁর সেই বিখ্যাত ‘হাম রহে ইয়া না রহে ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’। এই গানের কথাকে এই জীবনে এমনভাবে সত্যি করে দিয়ে চলে যাবার মতো শিল্পী মানুষ খুব কমই এই ধরায় জন্ম নেন। আর কেকে তাঁদেরই একজন।   

ইতিমধ্যেই তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। তাঁর নশ্বর দেহ নিয়ে মুম্বই যাওয়ার জন্য কলকাতায় এসেছে তাঁর পরিবার। এসেছেন স্ত্রী জ্যোতি কৃষ্ণা, ছেলে এবং মেয়ে। স্ত্রী জ্যোতির সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন কেকে’র। কিন্তু আচমকাই সব শেষ। শেষ একসঙ্গে পথ চলা। মাঝপথেই সব ছেড়ে চলে গেলেন কেকে। স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী জ্যোতি কৃষ্ণা। শুধুই যে ৩০ বছরের দাম্পত্য তাই-ই নয়, তার আগে থেকেই দুজনের মধ্যে বেস কয়েক বছরের সম্পর্ক ছিল। কেকের প্রেমিকা ছিলেন জ্যোতি। প্রেমিকাকেই বিয়ে করেছিলেন কেকে। 

আজ কেকে নেই, কেমন ছিল কেকে এবং জ্যোতির দাম্পত্য? কেমন ছিল তাঁদের সম্পর্ক? ফিরে দেখা যাক কেমন ছিল তাঁদের ব্যক্তিগত রসায়ন? কী শেখায় তাঁদের পারস্পারিক সম্পর্কের রসায়ন আমাদের? জেনে নেওয়া যাক।  

যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান শর্তই হল পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা। সময় যতই এগিয়ে যাক, এই শর্ত কিন্তু একই রয়ে গিয়েছে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও এই শর্ত ছিল, আজও আছে। দাম্পত্য, প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এসবের ক্ষেত্রে এই শর্ত আরও বেশি প্রযোজ্য। কেকে আর জ্যোতিও এর বাইরে নন। 

দাম্পত্যের ৩০ বছর আগে যে প্রেমের সম্পর্ক, সেই সম্পর্কে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা থাকলে, সম্পর্কের পথচলা অনেকটাই মসৃণ হয়ে যায়। কেকে এবং জ্যোতির ক্ষেত্রেও তার প্রমাণ মেলে। শোনা যায়, কৈশোর থেকেই একে অপরের সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁদের। কৈশোরের প্রেম জ্যোতির হাত ছেড়ে যাননি কেকে। পাশাপাশি কেকে যখন প্রতিষ্ঠিত হননি, তখনও তার প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা রেখেছিলেন কেকের স্ত্রী জ্যোতি। সঙ্গীর সুসময়ে যেমন তাঁর পাশে থাকা জরুরি ঠিক সেই ভাবেই সঙ্গীর দুঃসময়ে পাশে থাকাটাও জরুরি। তাতে সম্পর্কের বাঁধন আরও দৃঢ় হয়। আর নিজেদের ক্ষেত্রে সেটাই করে দেখিয়েছিলেন কেকে আর জ্যোতি। 

বিয়ের আগে পাত্রের পরিবার কেমন, পাত্র নিজে কেমন ,মানুষ, সেটা যেমন খতিয়ে দেখে পাত্রীর পরিবার, ঠিক সেইভাবেই পাত্র অর্থনৈতিক ভাবে কতোটা সুপ্রতিষ্ঠিত সেটাও দেখা হয়। এই নিয়মেরও কোনও বদল হয়নি। আর হওয়ার কথাও নয়। দশকের পর দশক ধরে এর কোনও অন্যথা হয়নি, হবেও না। প্রেমিকের চাকরি না থাকার কারণে যে কতো প্রেমের ফুল অকালে ঝরে গেছে, কতো প্রেম যে পূর্ণতা পায়নি, কতো প্রেমিকা যে আড়ালে চোখের জল ফেলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। বিয়ে করতে গেলে ছেলের ভাল, মোটা মাইনের চাকরি থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। কেকে-কেও এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ও পাশে সবসময় ছিলেন প্রেমিকা জ্যোতি। 

এটাই প্রত্যেকের কাছে শিক্ষণীয়। প্রত্যেক মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত মানুষটি কেমন? মানুষটি খাঁটি হলে, কখনও কখনও নিজের ইচ্ছের ঊর্ধ্বে উঠেও সেই সঙ্গীর কথা ভাবা উচিত। একসঙ্গে থাকার ইচ্ছে অদম্য হলে, আরও শক্ত করে হাত ধরতে হবে। যতই বাধা আসুক হাত ছাড়লে হবে না। হাল ছাড়লে হবে না।  

১৯৯১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কেকে আর জ্যোতি। এর আগের পথ একেবারেই সুগম ছিল না। কোনও চাকরি করতেন না কেকে। তাই তাঁর উপর বাড়তি চাপ তো ছিলই। কারণ ‘বেকার’ জামাই কোনও মেয়ের বাবা-মা চান না। কিন্তু কেকেও বদ্ধপরিকর ছিলেন জ্যোতিকেই বিয়ে করবেন। জ্যোতিও হাত ছাড়েননি কেকে’র। 

একটি চ্যাট শো-এ কেকে জানিয়েছিলেন, একপ্রকার বাধ্য হয়েই জ্যোতিকে বিয়ে করার জন্য সেলসের চাকরি নিয়েছিলেন কেকে একসময়। সেই সময় এভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে ৩০ বছর পার হয়েছে। কখনও কোনও পরিস্থিতিতেই একে অপরের হাত ছেড়ে দেননি তাঁরা। যদিও সেই সেলসের চাকরি খুব বেশিদিন করেননি শিল্পী। তিন মাস পরেই তাঁকে সেই সেলসের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল।

অন্যদিকে, সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য যেসময়ে কেকে ও জ্যোতির সম্পর্ক বা বিয়ে হয়, সেই সময় প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ছিলেন না কেকে। ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। গায়ক কেকে-এর প্রথম অ্যালবাম মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। কিন্তু তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আজ দুই দশক পার করেও গায়ক কেকে- এর প্রতিটি গান একইভাবে জনপ্রিয়, চিরসবুজ। একইরকম ভালোলাগা তৈরি হয় তাঁর সেইসব গানে আজও।  

প্রতিষ্ঠিত মানুষকে বিয়ে করলে জীবন হয়তো মসৃণ হয়, কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঘরবাঁধার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আনন্দ আরও অনেক বেশি। কেকে এবং জ্যোতির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েহচিল। একসঙ্গে পথ চলার পথে বাধা এসেছে অনেক। কিন্তু থামলে হবে না। এটাই শিখিয়েছেন কেকে আর জ্যোতির প্রেম, ভালোবাসা। ভাল সময়ে অনেকেই পাশে থাকতে চান, কিন্তু কঠিন সময়ে পাধে থাকাটাও ততোটাই জরুরি। কেকে এবং জ্যোতি ছিলেন কঠিন সময় একে অপরের পাশে।

আরও একটা বিষয় শিক্ষণীয়। জ্যোতি এবং কেকে-এর পেশা এক নয়, আবার কেকে-এর জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতি প্রভাব ফেলেনি তাঁদের সম্পর্কে। এই দুজনের দাম্পত্য সত্যিই শিক্ষণীয় সকলের কাছে। পেশাগত খ্যাতি আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রেখে কীভাবে একসঙ্গে চলতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস রাখতে হবে। এটাই শেষ কথা। আর সেটাই শিক্ষণীয়।