বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ফের চাঞ্চল্য রামপুরহাটে। রামপুরহাটে সোমবার রাতে জাতীয় সড়কের ধারে একটি দোকানে বসে থাকার সময় বোমা মেরে খুন করা হয় রামপুরহাটের একটি গ্রামের পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, ফের একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল রামপুরহাট। অভিযোগ রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, এই গ্রামেরই বাসিন্দা নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখ।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা গ্রাম। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। গোটা গ্রামে রয়েছে চাপা আতঙ্ক। অভিযোগ গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে পুলিশকে। এদিকে, ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে করে বীরভূমে যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এমনটাই জানিয়েছেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে বেলা ১টায় হেলিকপ্টারে করে রওনা হওয়ার কথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধে রাতের দিকে, তৃণমূল নেতা তথা তিনি রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বরশাল গ্রামের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের পরই গ্রামে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। রাতের দিকেই বগটুই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এই ঘটনায় প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, এই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। জানা গিয়েছে, যে বাড়িগুলিতে আগুন ধরানো হয়, তার মধ্যে একটি বাড়িতেই ৭ জন ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে। উপপ্রধান খুনের পর, অশান্তি এড়াতে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন হয়েছিল রাতেই। তারপরেও কীভাবে এতো বড় ঘটনা ঘটে গেল, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে। ঘটনাস্থলে আগুন নেভাতে যায় দমকলবাহিনী। তাঁরাই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই রামপুরহাট এলাকা অশান্ত হয়ে রয়েছে। গতকাল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার আট মাস আগে তাঁর মেজভাই একইভাবে খুন হয়েছিলেন। এরপর কাল উপপ্রধান খুন হলেন এবং কাল রাতেই ওই গ্রামে এতোগুলি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। যাতে আরও কয়েকজনের মৃত্যু ঘটল। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। সত্যিই কি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল? ঘটলে কে বা কারা আগুন ধরিয়েছিল? ইতিমধ্যেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে যাচ্ছে ফরেন্সিক টিমও। পুলিশের একাংশের অনুমান, কোনও সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা শর্ট সার্কিটের থেকেও এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পুরো বিষয়টি নিয়েই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে তদন্তকারী দল পাঠানো হচ্ছে রামপুরহাট- এর ওই গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী।
অন্যদিকে, রামপুরহাটের ঘটনার পর, বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রিত মণ্ডল রাতে বোমাবাজি এবং অশান্তির খবর অস্বীকার করেছেন। এমন কিছু ঘটেনি বলেই তাঁর দাবি। তিনি জানিয়েছেন যে, ওখানে একটি বাড়িতে শর্ট সার্কিট হওয়ার জেরেই এই দুর্ঘটনা এবং এতোজনের মৃত্যু হয়েছে বলেই তিনি দাবি করেছেন।
আবার ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যে, উপপ্রধান খুনের পর আদতে ওখানে ঠিক কী ঘটেছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানে না। সবটাই তদন্ত সাপেক্ষ। পাশাপাশি এতজনের মৃত্যু দুঃখজনক বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে, রাজ্য বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন যে, রাজ্যে যে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, রামপুরহাটের ঘটনা সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল।