দীর্ঘ চাকরি জীবনের পর অবসর মমতার। নাহ! ইনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। এই মমতা হল একটি ঘোড়া। বিগত ১০ বছর দেশের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে এসেছে সে। সঙ্গী ছিল গাইড নামে আরেকটি ঘোড়া। অবশেষে তাদের দু`জনকেই একসঙ্গে অবসর দেওয়া হল। তাদের জন্য চালু হয়েছে পেনশনও। অবসরকালীন ভাতা দিয়েই এখন দিব্যি জীবন কাটছে দুই ঘোড়ার।
মালদা রেঞ্জের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিল মমতা ও গাইড। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গেই দেশরক্ষার কাজ করেছে দুই ঘোড়া। দীর্ঘ ১০ বছর সীমান্ত সুরক্ষায় ছুটে বেড়ানোর পর এবার অখণ্ড অবসর দু`জনের। বর্তমানে মমতার বয়স ২৩ বছর। গাইডও বয়সে কিছুটা ছোট। মালদার কালিয়াচক থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শ্মশানি বিএসএফ চৌকির ঘেরাটোপের মধ্যেই অস্থায়ী এক অশ্বশালায় দিব্যি দিনযাপন করছে তারা।
সেই আস্তাবলে গেলেই দেখা মিলবে বিএসএফের একজন কর্মী প্রভীন সিং রাঠোরের৷ ওই দুই ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তার উপর। দু`জনের শরীর, হাত, পা দলাই-মলাই করে দিচ্ছেন রাজস্থানের ওই যুবক। তিনি জানান, "চাকরিরত অবস্থায় মমতা ও গাইড দু`জনেই খুব পরিশ্রম করত। সশস্ত্র জওয়ানদের পিঠে নিয়ে সীমান্তের দুর্গম এলাকায় অভিযান চালাতে এদের জুড়ি ছিল না। তখন খাবারের জন্য একশো শতাংশ ভাতা পেত। এখন অবসরের পর সার্ভিস রুল অনুযায়ী ৭০ শতাংশ ভাতা মেলে। তা দিয়েই খাবার জোটে।"
চাকুরিরত অবস্থায় যখন পুরো বেতন পেত, তখন মমতা ও গাইডের খাবারের তালিকায় থাকত ছোলা, লবণ, ভুষি, ছোলার ছাতু ও চিটে গুড়। চাকরির শর্ত মেনে এখন যেহেতু ৭০ শতাংশ পেনশন মিলছে তাই এখন খাবারের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে ছাতু ও চিটে গুড়। এখন খাবারে দেওয়া হয় ছোলা, লবণ আর ভুষি। চরতে গিয়ে মিলছে সবুজ ঘাস। তবে পরিশ্রমও অবশ্য কমেছে। এখন দু`বেলা হাঁটার সঙ্গে এক ঘণ্টা করে বডি ম্যাসাজই প্রতিদিনের রুটিন।
বিএসএফ সূত্রে খবর, মধ্যপ্রদেশের টেকনোপুরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বিশেষ ট্রেনিং অ্যাকাডেমি। সেখানে ঘোড়া, হাতি, কুকুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৩ বছর আগে সেখান থেকেই মমতাকে মালদায় আনা হয়েছিল। ১২ বছর আগে আনা হয় গাইডকে। সীমান্তে যেখানে মোটরবাইক যাওয়ার পর্যন্ত অবস্থা নেই, সেইসব দুর্গম এলাকায় টহল দেওয়া, চোরাকারবারিদের পিছু ধাওয়া করার ক্ষেত্রে এই দুই ঘোড়া ছিল বিএসএফ জওয়ানদের অন্যতম সঙ্গী। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করার পরে সম্প্রতি অবসর নিল তারা।
`হর্স হ্যান্ডেলর` প্রভীন সিং রাঠোর জানান, ঘোড়াগুলির বয়স হয়ে গিয়েছে। তাই এখন আর সীমান্তে টহলদারির কাজ করানো হয় না। তবে এই দুই ঘোড়ার সার্ভিস বুক রয়েছে। বেতন এবং পেনশন বাবদ সরকারের কত টাকা খরচ হচ্ছে সেই হিসাবও থাকছে। আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ঘোড়াদের নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু এখন সেটা নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই তারা এখন অবসর নিলেও জওয়ানদের পরিচর্যায় রাখা হয়।
প্রভীনের কথায়, সীমান্ত প্রহরীর কাজে ফের দুটি ঘোড়া নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শূন্য পদে নতুন দু`টি ঘোড়া নিয়ে আসা হবে। যতদিন না আসছে, ততদিন কিছুটা সমস্যা হবে। তবে নতুনদের অপেক্ষায় থাকলেও পুরোনো সহকর্মীদের যত্নের কোনও ত্রুটি হবে না বলেই জানান তিনি।