নিজস্ব প্রতিবেদনঃ আলোচনার চলার সময় শুরু হয় কথা কাটাকাটি, তার থেকে বিবাদ। সেই বিবাদ শেষ পর্যন্ত গড়াল হাতাহাতিতে। বর্ধমানের ইউনিভির্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির শিক্ষক এবং কর্মীরা এদিন হাতাহাতিতে জড়ালেন। এদিন দুপুরে ঘটা এই ঘটনায় জখম হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক।
এখানেই শেষ নয়, এই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন পড়ুয়াও। যদিও পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে, শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে কলেজের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। কলেজের এক শিক্ষিকার সঙ্গেও আশালীন আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই আহতদের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুই গোষ্ঠীর কোন্দলেই এই ঘটনা বলেই জানা গিয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে দুই কর্মী অমিয় ঘোষ, প্রিতম দে কলেজের শিক্ষক অপূর্ব ঘোষ এবং প্রার্থপ্রতিম সরকারকে মারধর করে বলেই অভিযোগ। মারধোর করা হয় কমলকৃষ্ণ দাস নামে আকাউন্ট বিভাগের এক কর্মীকে। মহিলা শিক্ষিকা কস্তুরি ঘোষকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় বলেও অভিযোগ। আহত দুই শিক্ষক এবং একজন কর্মী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর বর্ধমান থানায় আলাদা আলাদাভাবে অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু কেন এই অশান্তি এবং হাতাহাতি? কলেজের একটা সূত্রের খবর, গত মে মাসে কলেজের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মিত্র একজন সাফাই কর্মীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করেন। যারা কাজ করছেন, তাঁদের বঞ্চিত করে এই নিয়োগের বিরোধিতা করেন অন্যান্য কর্মীরা। পরে এই সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা তথা ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করেছেন, কলেজের সাফাইকর্মী নিয়োগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কো-অপারেটিভ থেকে। সেখানে শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকজন রয়েছে। তাঁরা সাফাই কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হলেও কেউ কাজ করেন না। সেই কারণেই তাঁকে অন্য লোক রাখতে হয়। তাঁর নিয়োগ করা ওই কর্মীকে শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় চলতি বছরের মে মাসের ২৬ তারিখ কলেজে লোকজন নিয়ে গিয়ে ঢুকে মারধোর করে বলেও অভিযোগ। এই মর্মে থানায় পরে অভিযোগও দায়ের করা হয়। সেই থেকেই চলছে কলেজে অশান্তি। যা আজ হাতাহাতিতে গড়ায়।
অন্যদিকে, কলেজের অধ্যক্ষের বিরোধী হিসেবে পরিচিত কর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অধ্যক্ষ নিয়মিত কলেজে আসেন না। কিছু শিক্ষক এবং কর্মী তাঁর বাড়ি গিয়ে নানা কাজে প্রয়োজনীয় সই করিয়ে আনেন। এর পাশাপাশি আরও অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে যে, অধ্যক্ষ নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। এবার কর্মীরা সকলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সরব হয়েছেন। কর্মীদের আরও দাবি, সেই কারণেই অধ্যক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
এদিকে, অধ্যক্ষ দাবি করেছেন যে, এদিন সকালে একটি অনলাইন বৈঠক হয় কলেজে পড়ুয়াদের ফর্ম ফিলাপ নিয়ে। সেই বৈঠকে ঠিক হয় যে, যারা এখনও টাকা জমা দিতে না পারায় ফর্ম ফিলাপ করতে পারেননি, তাঁদের আরও ১ মাস সময় দেওয়া হবে। শিক্ষক অপূর্ব ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম সরকার এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এদিন তাঁরা যখন কলেজে আসেন এবং বৈঠকে যোগ দেন, সেই সময় এই প্রস্তাবে শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক শুরু হয় এবং বাইরে থেকে দুই কর্মী যোগ দেন এবং অধ্যক্ষ পক্ষের দুই শিক্ষক অপূর্ব ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম সরকারের উপর চড়াও হয়ে, তাঁদের মারধর করা হয়। তাঁদের জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়াও হয়। এরপর পড়ুয়ারা দুটো দলে ভাগ হয়ে মারামারিতে জড়ান। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে।
কলেজের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মিত্র বলেন, বারবার কলেজে অশান্তি সৃষ্টি করছে কিছু কর্মী। তাঁদের মদত দিচ্ছেন শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। আগেও তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলেই তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি সেই কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সেই কারণেই তাঁরা প্রতিদিন কলেজে ঝামেলা করছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিরোধী পক্ষের সব অভিযোগ মিথ্যে, এমনটাও বলেন তিনি।
আবার যার মদতে কলেজে অশান্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ, সেই শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, অধ্যক্ষ নিজের কাজ সঠিকভাবে করছেন না। কলেজের পরিবেশ ঠিক নেই, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করবো। এদিনের ঘটনায় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ বলেন, ‘সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে অনলাইনে মিটিং করে কলেজ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অধ্যক্ষ কলেজ আসছেন না। আমরা এই বিষয় নিয়ে অপূর্ব ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম সরকারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তর্কাতর্কি হয়। সেই সময় পড়ুয়াদের তাঁরা উত্যক্ত করে এবং ঝামেলা লাগানো হয়। তাঁদের মারধোর করে এবং গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।’