অসহায় ছেলের চিকিৎসার জন্য ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে ঘুরছেন বাবা-মা। ছেলেকে কখনও সরকারি হাসপাতাল আবার কখনও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরে যাচ্ছেন বিগত আট বছর ধরে। ছেলের এই অবস্থাতে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। মঙ্গলবার সকালে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পায়ে শিকল বেঁধে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন বাবা-মা। সেখানেই জানা যায় অসহায় ছেলেটির কাহিনী।
জানা গিয়েছে, মালদা জেলা হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা রোডের বরনাহি গ্রামের বাসিন্দা অসহায় ছেলেটির নাম সেলিম। বয়স ১৮ বছর। বাবার নাম জাকির হোসেন, মা সেহেরা বিবি। জাকির বাবুর তিন ছেলে। সেলিম পরিবারে বড়। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত আট বছর ধরে ছেলে মানসিক রোগে আক্রান্ত। তারপর থেকেই ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছেন বাবা-মা।
ছেলের চিকিৎসার জন্য কখনও মালদা আবার মুর্শিদাবাদের মানসিক হাসপাতালে ছুটে বেরিয়েছেন মা-বাবা। কিন্তু কোথাও ছেলেকে ভর্তি নিচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই মঙ্গলবার সকালে পুনরায় ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে আসেন জাকির বাবু। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার ভর্তির কোন সুরাহা হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে।
বিগত আট বছর ধরে অসহায় ছেলেকে নিয়ে বাবা-মা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কখনও সরকারি হাসপাতাল তো কখনও বেসরকারি হাসপাতাল। থাকার জন্য নেই কোনও পাকা বাড়ি। আপাতত ছেলেকে যে কোথায় রাখবেন তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এমনিতে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক বিভাগ থাকলেও ছেলেকে এখনও পর্যন্ত ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই বাবা-মা সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যাতে ছেলেকে এখন সরকারি কোনও হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
জানা গিয়েছে, এর আগেও ছেলেকে ভর্তি করাতে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন জাকির হোসেন। ছেলেকে মানসিক বিভাগে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চারদিন মেডিসিন বিভাগের ভর্তি থাকার পরে ছেলেকে ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই এদিন সকালে আবার ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাজির হয়েছেন বাবা-মা। কখন ছেলেকে ভর্তি করাতে পারবেন সেই অপেক্ষায় বসে রয়েছেন মেডিকেল কলেজের সামনে। শিকল বাঁধা অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে অসহায় বাবা-মা। তাঁদের দাবি, ছেলেকে হাসপাতালের মানসিক বিভাগে ভর্তি করালে তাঁরা অনেকটাই শান্তি পাবেন।