বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে। বগটুই গ্রামে এখন জেন শশ্মানের নীরবতা। কাক-পক্ষীর আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আতঙ্কে প্রাণের দায়ে গ্রাম ছেড়েছেন বহু মানুষ। এখনও পর্যন্ত কারও সাহস হয়নি সে রাতের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলার। ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে? কারা মধ্যরাতে নিহত ১০ জনের আর্তনাদ শুনেছিল? কারাই বাঁ আগুন ধরিয়েছিল? প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।
এই ১০ জনের মধ্যেই ছিলেন নবদম্পতি সাজিদ-মর্জিনা। সোমবার সকালেই নানুর থেকে বগটুই গ্রামে বাপের মর্জিনার বাপের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। সকাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বগটুই গ্রামে পৌঁছানোর কথা বাড়িতে ফোন করে জানিয়েওছিলেন সাজিদ। কিন্তু রাত বাড়তেই বিপদের কালো মেঘ ঘ্নিয়ে আসতে শুরু করে। বিপদ আছে বুঝতে পেরেই সম্ভবত পুলিশ নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন বন্ধুকে। তবে, সেটাই সাজিদের শেষ কথা হবে, এমনটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি পরিজন এবং সাজিদের বন্ধু। মঙ্গলবার সকালে ফোন বন্ধ পেয়েই তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। এরপর খবর পেয়েই তাঁরা ছুটে যান রামপুরহাট হাসপাতালে। কিন্তু তখন সব শেষ। সাজিদের এক বন্ধু জানিয়েছেন যে, ‘মাথার খুলিটুকু ছাড়া লাশগুলো চেনাই যায়নি।’
সাজিদের বাবা জানিয়েছেন, ‘সকালে ছেলে-বউমা রামপুরহাটে যায়। দুপুরে সেখানে পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়ে ফোন করেছিল। তারপর রাত ১২ টা নাগাদ ছেলে ওঁর বন্ধু কাজই মাহিমকে ফোন করে। তাঁকে বলে, আমাদের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে চারিদিকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুই পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা কর। মহিম সেকথা আমাকে জানাতে আসে। আমি ফোন করে ছেলে-বউমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে বোধহয় সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, আর যোগাযোগ করতে পারিনি। মঙ্গলবার সকালে পুড়িয়ে মারার খবর পাই। আমি চাই, যাঁরা আমার ছেলে-বউমাকে খুন করছে, তাঁদের ফাঁসি দেওয়া হোক।’ উল্লেখ্য, মাত্র মাস দুই আগেই সাজিদের বিয়ে হয়েছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিয়ে হয় কাজই সাজিদুল রহমান এবং মর্জিনা খাতুনের। জানা গিয়েছে, নানুনের দান্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজিদ।
সাজিদের এক বন্ধু জানিয়েছেন, তিনি জানতে পেরেছিলেন রাত ৯ টার পর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সকাল ১০ টার সময় বেরিয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে যাই। গিয়ে যা দেখলাম, লাশ চেনা যায়নি। মাথার খুলিটুকু শুধু আছে, আর কিছু নেই।’
এদিকে, রামপুরহাটের বগটুইয়ের এই ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতি রীতিমতো উত্তপ্ত। গোটা ঘটনায় বগটুইয়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। গ্রাম প্রায় জনশূন্য। অনেকেই গ্রাম ছেড়েছেন। এই অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে দলা পাকানো দেহগুলি নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়েছে। মৃতদের তালিকায় শিশু ও মহিলাও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে খুন হল তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। দমকলবাহিনীর দাবি, পুড়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রাজ্য সরকার সিট গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে, গতকালই এই ঘটনায় রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দাবি করেছেন যে, রামপুরহাটের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বিরোধীরা অভিযোগ, তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নেতৃত্বেই এই হত্যালীলা চলেছে। তবে এনিয়ে এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।