আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women`s Day)। আজ সমাজের সকল নারীদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের অবদানকে কুর্নিশ জানানোর দিন। আর এমন একটা দিনেই সামনে এল এক মা`য়ের কাহিনী। এমন এক মা যিনি গতকাল সকালে সন্তানের জন্ম দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতালেই বসে দিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাঁর অসাধারণ মনের জোর আর ইচ্ছেশক্তিকে কুর্নিশ জানালেন এলাকার মানুষ।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার নানারাই এলাকায়। ওই গ্রামের বাসিন্দা আনজারা খাতুন(১৮) এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামেরই যুবক মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে প্রেম ছিল তার। তিন বছর আগে তারা বিয়েও করে। কিন্তু বিয়ের পরেও পড়াশোনা বন্ধ করেনি আনজারা। দশম শ্রেণীতে উঠে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়লেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
এদিকে ডাক্তারের পক্ষ থেকে সন্তান প্রসবের সময় ১৬ই মার্চ দেওয়া হলেও গতকাল, পরীক্ষা শুরুর সকালে প্রসব বেদনা ওঠে আনজারা। অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। তারপর সকাল সাতটা নাগাদ জন্ম দেয় ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। তবে তার পরও সে পরীক্ষা দিতে উৎসাহ দেখায়। শুধু তাই নয়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিতেও বসে যায় আনজারা। তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশি পাহারায় চলে সেই পরীক্ষা।
প্রথম দিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। আর পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করার ব্যাপারেও কিন্তু আশাবাদী আনজারা। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়েই সে জানায়, "সকালেই আমার কন্যা সন্তান হয়েছে। কিন্তু আজকেই আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাই পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। ভালো পরীক্ষা দিলাম। আশা করি ভালো ফলাফল করে ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবো।" অন্যদিকে, হরিশ্চন্দ্রপুরের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভেন্দু ভক্ত জানিয়েছেন, "আমাদের হাসপাতালে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভর্তি ছিল। আজ সকালে সে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তা সত্ত্বেও সে হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল। তাই আমরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম যাতে কোনও অসুবিধা না হয়। সে-ও সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে।"