বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সবে মাত্র তিনদিন পার হয়েছে। আতঙ্ক ও যন্ত্রণার ছাপ এখনও চোখে-মুখে স্পষ্ট। কিন্তু থেমে নেই লড়াই। স্বামী শরিফুল ওরফে শের মহম্মদ শেখ স্ত্রীকে সরকারি চাকরি করতে দেবে না, তাই স্ত্রী রেণু খাতুনের ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কী? মঙ্গলবার থেকেই দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বেডে শুয়েই শুরু করলেন নতুন লড়াই। জীবনযুদ্ধে হার না মানার মানসিকতাকে সঙ্গী করে নতুন পথচলা শুরু করলেন বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। বাঁ হাত দিয়েই শুরু করলেন লেখালিখি।
রেণুর পাখির চোখ, সরকারি নার্সিংয়ের চাকরি করবেনই। তাই ডান হাতের কব্জি বাদ গেলেও, যাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় পিছু হটতে না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। এখানেই শেষ নয়, সরকারি চাকরি ধরে রাখার ব্যাপারে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি স্বামী ও তার অভিযুক্ত দুই বন্ধুকে গ্রেফতারির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন রেণু। এদিন তাঁর সঙ্গে দুর্গাপুরের নার্সিংহোমে রেণু খাতুনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে রেণুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রেণুর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহকর্মীরাও। এই ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটানোর জন্য অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন রেণুর পাশাপাশি তাঁর সহকর্মী এবং পরিবার-পরিজনেরা। ইতিমধ্যেই কেতুগ্রাম থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে চাকটা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রেণুর শ্বশুর, শাশুড়িকে। তবে এখনও পলাতক রেণুর স্বামী এবং তাঁর দুই বন্ধু। তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন রেণু।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে রেণু বলেন, ‘আমার স্বামী এবং তার দুই বন্ধু যেখানেই পালিয়ে যাক, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। আমি চাই এই বিষয়টিতে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন।’
বিয়ের আগে আড়াই বছরের প্রেম। তারপর সেই প্রেমিককেই ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন। সেই দাম্পত্য জীবনেও কেটে গেছে ৫ বছর। কিন্তু ভরসা বা বিশ্বাসের জায়গাটাই মজবুত হল না। বর্তমান স্ত্রীকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও, তাঁকে বিশ্বাস-ভরসা করা তো দূর, তাঁর সাফল্যটাও মেনে নিতে পারলেন না স্বামী। সেই স্বামী যে স্ত্রীর সাফল্যে এতোটা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে, তা কল্পনাই করতে পারেননি বর্ধমানের কেতুগ্রামের গৃহবধূ তথা নার্স রেণু খাতুন। শারীরিক যন্ত্রণার থেকে এখন আতঙ্কই বেশি রেণুর মনে। ডান হাতের কব্জিটাই কেটে নিয়েছেন তাঁর স্বামী।
স্বামী সরকারি করতে দেবে না বলে হাতের কব্জি কেটে নিলেও, রেণু স্বামীর এই অন্যায় ইচ্ছে পূরণ করতে দিতে নারাজ। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরকারি চাকরিটা দেওয়ার আবেদন জানানোর পাশাপাশি বাঁ হাত দিয়েই কাজে সক্ষম ও পারদর্শী হওয়ার লড়াই শুরু করে দিলেন। এদিন তিনি বাঁ হাতে পেন ধরে সাদা কাগজে নিজের নাম, ঠিকানা লিখেছেন। আবার ফুলও এঁকেছেন। সেই লেখা বা আঁকা দেখে মনে হবে না, রেণু খাতুন বাঁ হাতে প্রথমবার পেন ধরলেন। বাঁ হাতেই যে তিনি সমস্ত কাজ সামলাতে পারবেন, এটা যেন সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি নার্সিংয়ের সরকারি চাকরির প্যানেলে নাম উঠেছে রেণু খাতুনের। কিন্তু স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চাননি অভিযুক্ত স্বামী শরিফুল ওরফে শের মহম্মদ শেখ। তাই শনিবার রাতে রেণু ঘুমিয়ে থাকার সময় শের মহম্মদ এবং তাঁর দুই বন্ধু মিলে রেণুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে, তাঁর ডান হাতের কব্জি কেটে নেয়। অভিযোগ এমনটাই। এরপর থেকে হাসপাতালেই ভরতি।