বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ফের রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ধরাশায়ী রাজ্য বিজেপি। আসানসোল কেন্দ্রটিও বিজেপি থেকে তৃণমূলের দখলে চলে গিয়েছে উপনির্বাচনে। আর এই ফলাফলের পরেই বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদের বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল। এদিকে, গতকালই ফল প্রকাশের পর ‘বেসুরো’ ছিলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রাজ্যের দুই উপনির্বাচনে হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে।
গতকালই ‘বেসুরো’ হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রাজ্যের দুই উপনির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন নেতৃত্বের উপর। এবার বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরী শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। তবে, শুধু গৌরী শঙ্কর নন, রাজ্য কমিটির সদস্য পদত্যাগ করলেন রাজ্য কমিটির আরও দুই সদস্য। এই তালিকায় রয়েছেন বহরমপুরের বিধায়ক কাঞ্চন মৈত্র এবং বাণী গঙ্গোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই সেই চিঠি রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে এই বিজেপি বিধায়ক গৌরী শঙ্কর ঘোষ লিখেছেন, ‘২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলার দু’বারের সভাপতি আমি... অধিকাংশ ক্ষেত্রে অদক্ষ, অযোগ্য, দুর্বল কার্যকর্তাদের সংগঠনের দায়িত্ব দিয়ে তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর যে উপনির্বাচনগুলি হয়েছে সেখানে আমরা পর্যদুস্ত হয়েছি।’
দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তুলে দিয়ে, রাজ্য সম্পাদকের পথ থেকে ইস্তফা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন এই বিধায়ক। এদিন বহরমপুরে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে গৌরীশংকর ঘোষ জানিয়েছেন যে, জেলা মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনের জন্য মোট ৫১ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, সেই ৫১ জনের মধ্যে ১৮ জনের নাম বাদ দিয়ে, বিজেপির জেলা সভাপতি নিজের ইচ্ছেমতো লোকদের নিয়েছেন, যাঁরা আদতে অযোগ্য। এদিকে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বারবার রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হলেও, তাতে কোনও কাজ হয়নি। তাই একপ্রকার বাধ্য ও বিরক্ত হয়েই তিনি রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ইস্তফা দিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, অভিযোগের সুরে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘আমি ক্লাস সেভেন থেকে এই দলের সমর্থক। এলাকার কর্মীরা জীবন বাজি রেখে দল করে। কিন্তু, আমাদের কথা যেহেতু রাজ্য নেতৃত্ব শুনছে না, তাই রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। আমার কোনও কথাই গ্রাহ্য হচ্ছে না। তাই এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।’ তবে, দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও, পাশাপাশি তিনি আরও জানান যে, মৃত্যুর আগে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বিজেপিতেই থাকবেন। বড় বড়নেতারা দল বদল করলেও তিনি দল বদল করবেন না, বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
অন্যদিকে, বহরমপুর বিধানসভার বিধায়ক কাঞ্চন মৈত্র সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, জেলা বিজেপি সভাপতি তুঘলকি আচরণ করে চলেছেন। নিজের ইচ্ছেমত চলছেন। যার ফল ভুগতে হচ্ছে বিভিন্ন নির্বাচনে। সেই জন্যই তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির আরেক সদস্য বাণী গঙ্গোপাধ্যায়ও। তবে, এখনও পর্যন্ত এই তিনজনের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেয়নি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের এই তিন বিজেপির এই তিন নেতার পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আরেক বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, এসব বিষয় এখনই দলের গুরুত্ব সহকারে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত।