নিজস্ব প্রতিবেদনঃ বিষমদ কাণ্ডে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোঁড়া বর্ধমান শহর জুড়ে। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ জন। এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের মদ থেকেই কি এই বিষক্রিয়া ঘটেছে? এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এখনও পর্যন্ত যা ঘটনা ঘটেছে, তাতে তা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
বর্ধমান বিষমদ কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত এবং অসুস্থদের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিশেষ ব্র্যান্ডের মদটি সরকার অনুমোদিত দোকান থেকেই বিক্রি হওয়ার কথা। তাহলে কীভাবে বেসরকারিভাবে ওই মদ বিক্রি হচ্ছিল? সেই প্রশ্ন উঠছে। মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই পুরো বিষয়টি থেকে ধোঁয়াশা কাটবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটে পূ্র্ব বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায়। এই ঘটনায় সকাল থেকেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় বর্ধমানে। গতকাল রাতেই দু’জনের মৃত্যু হয়। এরপর এদিন বেলা বাড়তেই মৃতের সংখ্যা বাড়ে। শুক্রবার আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এখনও পর্যন্ত যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা হলেন, শেখ সুরবতি ৩৪), শেখ আমিন (৪৩), গৌতম দে (৪২) এবং চিন্ময় দে (৩৮)।
এদিকে, শেষ দুজনের বাড়ির লোক মদ খাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। তবে, বর্ধমান মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিষক্রিয়ার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে, সেটা মদ থেকেই কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই স্পষ্ট হবে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের আবগারি দফতর। এদিকে, বিষমদ কাণ্ডের জেরে বর্ধমান শহরের সমস্ত মদের দোকান বন্ধের নির্দেশ দেয় আবগারি দফতর। নির্দেশ পেয়েই সমস্ত অফ ও অন শপ বন্ধ করে দেন দোকানের মালিকরা। শহরে এই বিষমদ কাণ্ডে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি না হয়, তা এই সিদ্ধান্ত বলেই জানা গিয়েছে।
মদের দোকান বন্ধ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। যারা মদ খেয়ে মারা গেছেন বা অসুস্থ হয়েছেন গতকালের ঘটনায়, তাঁদের অনেকেই নিয়মিত মদ্যপানে অব্যস্ত ছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, জানা গিয়েছে, ধাবা এবং হোটেলে মদ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশসুপার কামনাশীষ সেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, গতকালই দুজনের মৃত্যু হয় বর্ধমান হাসপাতালে। তাঁরা দুজনেই নেশাগ্রস্ত আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। আজ সকালে আরও দুজন মারা গিয়েছেন। যদিও তাঁদের পরিবার মদের বিষয়টি স্বীকার করছে না।
এদিন সকালে বিষমদ কাণ্ডের পর এডিজি (ওয়েস্টার্ন জোন) সঞ্জয় সিং ও পূর্ববর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেনের নেতৃত্বে তল্লাশী অভিযান চলে। এদিকে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক স্তরেও ইতিমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘মৃতের সংখ্যাটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। পুলিশ গোপন করার খেলায় মেতেছে। তারা দলদাসের ভূমিকা পালন করেছে। ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হোক।’
অন্যদিকে, এই ঘটনায় তদন্ত চেয়েছে তৃনমূলও। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস দাবি করেছেন, প্রশাসন তৎপর আছে। উল্লেখ্য, এর আগে এমন ঘটনা বর্ধমান শহরে সম্প্রতি ঘটেনি। গলসীতে বেশ কয়েক বছর আগে বিষ মদ খেয়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছিল। একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এখন, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল?