বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ জিটিএ নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আরও একবার বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দার্জিলিং-এ একটি জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সেখান থেকেই পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পাহাড়ে ভোটের রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রের সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘ঠিক করুন ১০ বছরে ঝগড়া করবেন না। কাউকে দরকার হবে না। দেখুন দার্জিলিং কোথায় যায়।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশে বহু রাজনৈতিক দল আছে। ভোটের সময় এক কথা বলে, আর ভোট শেষ হলেই অন্য কথা শোনা যায়। ভোটের আগে বলেছিলাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করব, করে দিয়েছি। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের কথা বলেছিলাম, করেছি। দুয়ারে রেশনের কথা বলেছিলাম, করেছি। আর দিল্লির সরকারকে দেখুন, বছরে ১০ বার পেট্রোলের দাম বাড়ায়। গ্যাস, কেরোসিন তেলের দাম বাড়ায়, চা বাগান বন্ধ করে দেয়। নিজেরই আগুন জ্বালায়, আবার বদনামও করে বাংলার। ওরা বাংলাকে ভালোবাসে না। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। শুধু আগুন লাগানোই ওদের কাজ। ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স বলে চিৎকার করে রাজ্যের দুর্নাম করে।’
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, ‘ইউপিতে ভোটে জিতে পাঁচদিনে পাঁচবার পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বাড়িয়েছে। মানুষ কী খাবে, বিজেপি খাবে? নাকি দিল্লির লাড্ডু খাবে?’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের পড়াশোনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেছেন যে, পড়ুয়াদের কথা চিন্তাই করছে না কেন্দ্রের বিজেপিশাসিত সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা ডাক্তারি পড়ুয়াদের এখানে কোর্স শেষ করার সুযোগ দেওয়া হোক। নিজের নিজের রাজ্যে কোর্স শেষ করতে দেওয়া হোক তাঁদের। আমার টাকার দরকার ছিল না। নিজের খরচে ওঁদের পড়াতাম। কিন্তু গতকাল সংসদে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা অনুমতি দেবে না। পড়ুয়াদের জন্য কোনও দরদ নেই ওঁদের।’
অন্যদিকে, এই মন্তব্যের পাশাপাশি এদিন দার্জিলিং-এ দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভোটে জিতে কোন কোন প্রতিশ্রুতি রেখেছেন, তার খতিয়ানও তুলে ধরেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে, বলেন যে, ‘করোনার সময় আসতে পারিনি। দার্জিলিং-এ এলাম ২ বছর পর। পাহাড়ে যত বিধবা রয়েছেন, তাঁদের অনেক দুঃখে দিন কাটে। রাজ্য সরকার বিধবাদের জন্য ভাতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকার বর্তমানে ২১ লক্ষ বিধবাকে পেনশন দিচ্ছে। দুয়ারে দুয়ারে সরকারে আবেদন অনুযায়ী, আমরা ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৫৩ লাখ গৃহবধূকে লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়েছি। আরও অনেকেই পাবেন। কৃষক থেকে ছাত্ররাও অনুদান পাবে। সন্তানদের বাইরে পড়াশোনা করার জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ২১ হাজার পড়ুয়া স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড পেয়েছেন।
আবার মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, ‘পাহাড়ে চা বাগানের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্প তৈরি করেছি। ওইসব চা বাগানে যাদের ঘর নেই তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেব। সেই কাজ শুরু করেছি। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখন চা শ্রমিকরা পেতেন দৈনিক ৬৭ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০২ টাকা। আগে চা বাগান বন্ধ হলে ৬ মাসের পর সাহায্য পেতেন শ্রমিকরা। এখন ২ মাসের মধ্যে দেড় হাজার টাকা পান শ্রমিকরা। বিনা পয়সার বিদ্যুত্, জল পান তাঁরা, হেলথ কার্ড পান তাঁরা। মাসে ৩৫ কেজি রেশন সামগ্রী দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড যদি কেউ না পেয়ে থাকেন, তাহলে দুয়ারে সরকারে আবেদন করুন। আড়াই কোটি মানুষ এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধে পাচ্ছেন। এখন চিকিৎসার জন্য টাকা লাগে না, পড়ার জন্য খরচ হয় না, ১২ ক্লাসে মোবাইল পাওয়া যায়, ক্লাস নাইনে সাইকেল পাওয়া যায়। দার্জিলিংয়ে গত ২০ বছরে কোনও জমির পাট্টা দেওয়া হয়নি। আইনি সমস্যা ছিল। সেটাও আমরা মিটিয়ে দিয়েছি। দার্জিলিংয়ে হিল ইউনিভার্সিটি তৈরি হবে, কার্শিয়াংয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি শাখা হচ্ছে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এও দাবি, ‘দার্জিলিং এখন খুশি। প্রচুর পর্যটক আসছেন। যত হোটেল রয়েছে সব এখন ভর্তি। যখন দার্জিলিং হাসে তখন এমন পরিস্থিতি হয়। দার্জিলিংকে গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন করব। এখানে জিটিএর নির্বাচন হবে। আমি চাই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উন্নয়নের কাজ হোক। অনেক দেখলাম। ভোট এলেই কোনও রাজনৈতিক দল এসে এখানে উল্টোপাল্টা বলে ভোটে নিয়ে চলে যায়। তারপর বছরের পর বছর তাদের আর কোনও পাত্তা পাওয়া যায় না। তাই আপনাদের দিল্লির লাড্ডুর প্রয়োজন নেই। আপনাদের অনেক আছে। আপনাদের অনেক ট্যালেন্ট রয়েছে।’