বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামপুরহাটকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্য-রাজনীতি। বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সোমবার রাতে বগটুই গ্রামের তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। সেই বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরই বগটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুও রয়েছে। দমকলের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১০। যদিও ডিজি জানিয়েছেন ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকালই এই রামপুরহাট কাণ্ডে স্পেশাল টিম গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন জ্ঞানবন্ত সিং, মিরাজ খালিদ এবং সঞ্জয় সিং এসডিপিও এবং আইসি-র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে জানা গিয়েছে, রামপুরহাটের ঘটনায় জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন চিঠি দিয়েছে বীরভূমের এস পি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এই ঘটনায় বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি জানিয়েছে, ‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। এটা রাজ্য সরকার চলছে না সার্কাস চলছে? এতবড় একটা অঘটন ঘটে গেল! কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০ জন পশ্চিমবঙ্গবাসীর জীবন চলে গেল, আর পুলিশের কাছে কোনও ইনপুট নেই! পুলিশ করছেটা কী? উল্লেখ্য, রামপুরহাটের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিজেপি।
এদিকে, আজ সকালে রামপুরহাটের ওই গ্রামে যান সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্টে কাজ শুরু হওয়ার পরই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সরকারি কৌঁসুলিকে এজলাসে ডাকেন প্রধান বিচারপতি। সেখানেই তাঁদের জানিয়ে দেন যে, রামপুরহাটের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করার বিষয়টি। জানা গিয়েছে, বুধবারই দুপুর ২ টো নাগাদ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলার শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা জঘন্য অপরাধ। অবিলম্বে এর তদন্ত করা উচিত। ১০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। ঘরবন্দি করে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হল। এই ধরনের ঘটনার নেপথ্যে যারা আছে তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া দরকার।’
অন্যদিকে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন, এই দাবিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁদের এই বৈঠকের পরই রাজ্য সরকারের কাছে রামপুরহাট কাণ্ডে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছেন অমিত শাহ। রামপুরহাটের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এখানেই শেষ নয়, গতকাল সুকান্ত মজুমদার এও দাবি করেছেন যে, রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও পাঠাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তিনি জানিয়েছেন যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, তার জন্য তিনি আর্জি জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, আগামীকাল রামপুরহাট পৌঁছাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল।
গতকাল, ডিজি মনোজ মালব্য আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, দোষীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দখা হবে। পাশাপাশি তিনি এই ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ উড়িয়ে গ্রাম্য বিবাদকেই মান্যতা দিয়েছিলেন।
রামপুরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ফের শুরু হয়েছে তরজা। মঙ্গলবার টুইটে রামপুরহাটে অগ্নিকাণ্ড এবং সেই ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যুতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করেন রাজ্যপাল। তিনি টুইটে বলেন, ‘বীরভূমের রামপুরহাটে ভয়ঙ্কর ধরনের হিংসা, অগ্নিসংযোগ, ব্যাভিচারে প্রমাণিত যে, এই রাজ্যে সন্ত্রাসের সংস্কৃতি চলছে, আইনের শাসন নেই। ইতিমধ্যেই আটজনের প্রাণ গিয়েছে। মুখ্যসচিবের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে তথ্য চেয়েছি। শোকগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা।’ রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছ থেকে এই নিয়ে রিপোর্ট তলব করেন জগদীপ ধনখড়।
ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এরপরই পাল্টা চিঠি দেন রাজ্যপালকে। চিঠিতে তিনি জানিয়েছে, রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ্য, করেছেন, ‘আপনি যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার মন্তব্য নিরপেক্ষ তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সাংবিধানিক পদে থেকেও এই ধরনের মন্তব্য অসাংবিধানিক। সাংবিধানিক পদে থেকেও এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপিশাসিত রাজ্য-সহ দেশের অন্যান্য ঘটনায় আপনি নীরব। বাংলাতে কিছু ঘটলেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আপনার বিবৃতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ এরপর রাজ্যপালও চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এককথায় রামপুরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।