বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বারবার হাজিরা এড়িয়েও এবার আর শেষরক্ষা হল না। শেষপর্যন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে গরু পাচার মামলায় আটক হলেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এদিন সকালেই সিবিআই-এর বিশাল বাহিনী অনুব্রত মণ্ডলের বোলপুরের নীচুপট্টির বাড়িতে হানা দেয়। এদিন সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে ছিল বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনীও।
অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির প্রতি গেটেই মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। এরপর টানা একঘণ্টা পরে গ্রেফতার হন বীরভূমের এই দাপুটে নেতা। এদিন সিবিআই আধিকারিকেরা অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির ভিতরে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতারি পরোয়ানায় সই করিয়ে গ্রেফতার করেন বলেই খবর। এদিন অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ির সামনে প্রচুর মানুষের জমায়েত হন। সূত্রের খবর, অনুব্রত মণ্ডলকে আজ আসানসোল আদালতে তোলা হবে।
জানা গিয়েছে, গরু পাচার মামলায় তদন্তে অসহযোগিতার কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। এদিন অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে ঢোকার ৪৫ মিনিট কেটে গেলেও, অনুব্রত মণ্ডলের নাগাল পাননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকেরা। অনুব্রত মণ্ডল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের সহযোগিতা করছেন না বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রথমে অনুব্রতর ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। এরপর জোর করেই অনুব্রতর ঘরে ঢোকেন তাঁরা এবং তাঁকে গ্রেফতারি পরোয়ানায় সই করিয়ে, তাঁকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।
উল্লেখ্য, অনুব্রত গড়ে বুধবার রাত ১১ টা নাগাদ হানা দেয় সিবিআই-এর বিশাল বাহিনী। জানা গিয়েছে, ৫ টি গাড়িতে করে কলকাতা ও আসানসোল থেকে CBI-এর আধিকারিকেরা বোলপুরে যান বুধবারই। বুধবার কেন্দ্রীয় গেস্ট হাউসে রাত্রিবাস করেন তাঁরা। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বোলপুরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযানে বেরোন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকেরা। এদিন সকালে প্রথমে রতনকুঠি গেস্ট হাউসে তল্লাশি অভিযান চালান সিবিআই-এর আধিকারিকেরা।
এদিন অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যারা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের ফোনই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিন অনুব্রতকে তাঁর বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অন্যদিকে, চলতে থাকে অল্লাশি। সিবিআই সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় অনুব্ব্রত মণ্ডলের যোগ পাওয়া দিয়েছে তদন্তে। এদিকে, প্রথম থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠছে।
জানা গিয়েছে, আজ গ্রেফতারের পর অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সিবিআই সূত্রে খবর, আজ অনুব্রত মণ্ডলকে প্রথমবার অভিযুক্ত হিসেবে নোটিস দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এর আগে তাঁকে ১০ বার সাক্ষী হিসেবে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই অনুব্রত মণ্ডলের নাম উঠে আসে। এদিকে, সিবিআই তাঁকে তলব করলেও, বারবার আইনজীবীর মারফৎ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু সিবিআই-এর ১০ তম নোটিস পাওয়ার পর থেকেই কার্যত মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অনুব্রত মণ্ডল। তাছাড়া এবার আর এসএসকেএম- এর চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও রক্ষাকবচ মেলেনি। সোমবার সিবিআই হাজিরা এড়িয়ে এসএসকেএম-এ গেলেও, হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর শারীরিক নানা সমস্যা থাকলেও, ভর্তির প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের এক চিকিৎসক তাঁকে বাড়িতেই দেখতে আসেন। যা নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়। তাঁকে সাদা কাগজে বেড রেস্টের প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের সুপার ও অনুব্রত মণ্ডল নির্দেশ দেন বলে সাফ জানান ওই চিকিৎসক। সেই অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হতেই বিতর্কের শুরু। ওই অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসতেই জলঘোলা হতে শুরু করে। এরপরই বৃহস্পতিবার সকালে সোজা বাড়িতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করল সিবিআই।