নিজস্ব প্রতিবেদনঃ তাঁর হাতেই গড়ে উঠত অন্যের স্বপ্নের বাড়ি, বড় বড় অট্টালিকা। আর তা গড়তে গড়তেই নিজের স্বপ্নের ইমারতও সযত্নে গড়ে তুলতে শুরু করেন বিশ্বজিৎ। পুরো নাম বিশ্বজিৎ মণ্ডল। মেধাবী বিশ্বজিৎ মেমারি কলেজের টপার, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ফার্স্ট ক্লাস। এহেন বিশ্বজিৎ মণ্ডলের হাতেই স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের ভার দেন বড়শুল, ও শক্তিগড়ের কলানবগ্রামের বাসিন্দারা।
ইট-বালি-সিমেন্টের মাঝে নিজের স্বপ্নের হাত ছাড়েননি বিশ্বজিৎ, তাই তো এসবের মাঝেই বায়োডাটা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে যেতেন বিশ্বজিৎ। স্বপ্ন ছিল ভালো চাকরি পেলে বুড়ো বাবা-মাকে আর দিনমজুরি করতে পাঠাবেন না। ভালোভাবে তাঁদের রাখতে পারবেন। সংসারেও অভাব থাকবে না। দীর্ঘদিন পর এবার তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আর তাঁকে রোদে-জলে পুড়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হবে না। বাবা-মাকেও আর দিনমজুরি করতে হবে না, এবার বিশ্বজিৎ প্রকৃত মানুষ গড়ার কাজ করবেন। বিশ্বজিৎ এবার পড়াবেন কলেজে। রাতারাতি বদলে গেল বিশ্বজিৎ মন্ডলের ভাগ্য। বাড়িতে এখন চলছে মিষ্টিমুখ।
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর চাকরির কথা ভেবে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে ২০১৭ সাল থেকে লাগাতার চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। রেল, পি এস সি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি- কোনও চাকরির পরীক্ষাই বাদ দেননি। কিন্তু পরীক্ষা দিলেও মেলেনি চাকরি। এদিকে, বাবা রবীন মন্ডল এবং মা টুনি মন্ডলের দিনমজুরির পয়সায় সংসার চলত না। তাই এক পরিচিত বন্ধুর সঙ্গে শুরু করেন রাজমিস্ত্রির কাজ। সঙ্গে চলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজের সন্ধান করা। কিন্তু তাও ভাগ্য সহায় হয়নি। মেলেনি কোনও ভাল কাজ।
আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোমবার সকালেই ফোন পান বিশ্বজিৎ মণ্ডল। সেই সময় তিনি বড়শুল সিডিপি স্কুলের পিছনে কাজ করছেন। ফোনের ওপারে ছিলেন কলকাতা চিত্তরঞ্জন কলেজের প্রিন্সিপাল। তিনি বিশ্বজিৎকে কলেজের অতিথি অধ্যাপক হিসাবে কাজের প্রস্তাব দেন। বাড়ির সঙ্গে আলোচনা করে বায়োডাটা এবং সমস্ত সার্টিফিকেট-সহ দ্রুত কলেজে আসতে বলেন তিনি।
এরপর থেকেই কাজে মন বসছিল না বিশ্বজিতের। বিকালে বাড়িতে গিয়েই বাবা-মাকে জানায় এই খবর। সঙ্গে নিয়ে যায় মিষ্টি। বাবা-মা একবাক্যে রাজি। ছেলে কলেজে পড়াক, চাইছেন মা-বাবা। মা টুনি মন্ডল বলেন, ‘শিক্ষক হওয়ার শখ ছিল। অনেক স্কুলে কলেজে পার্ট টাইম শিক্ষকতার জন্য আবেদনও করেছিল। কিন্তু চাকরি মেলেনি। আজ ওর স্বপ্ন সফল।’
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, মঙ্গল বা বুধবার নাগাদ তিনি কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন। সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন যে, আগামীতে আর বাড়ি নয়, আদর্শ ছাত্র তৈরি করবেন তিনি।