বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি আজ নতুন নয়। বিজেপি নেতারা বারবার এই দাবি জানিয়ে এসেছেন। এদিন ধূপগুড়ির সভা থেকে সেই প্রসঙ্গ তুলেই বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বাংলা ভাগ হবে না। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু নেই। পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গ।’
সোমবার সন্ধেয় শিলিগুড়ি গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি পুরসভার ফুটবল মাঠে কর্মিসভা করেন তিনি। সেখানেই বাংলা ভাগ প্রসঙ্গে বিজেপিকে একহাত নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ। কীসের উত্তরবঙ্গ? এখানে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু নেই, কোনওদিন ছিলও না।’ এরপরই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, ততদিন রাজ্য ভাগ হবে না। বাংলা একটাই, সেটা পশ্চিমবঙ্গ। অনুরোধ করছি, কেউ উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গ বলবেন না।’
উত্তরবঙ্গ কথায় তাঁর ঘোরতর আপত্তি রয়েছে বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ‘লোকজন কথায় কথায় বলে উত্তরবঙ্গ। উত্তরবঙ্গ কথাটা আমরা শুনতে ভালো লাগে না। ধুপগুড়িতে সভা করব শুনেই মিডিয়ায় খবর হল, উত্তরবঙ্গ সফরে অভিষেক। কেন? আমি যখন ঝাড়গ্রামে, হলদিয়া, ব্যারাকপুরে সভা করি তখন তো আপানারা লেখেন না দক্ষিণবঙ্গ? কথা দিচ্ছি এখানে এমন তৃণমূলের সংগঠন গড়ব যে এর পরেরবার সাংবাদিকরা লিখবেন ধুপগুড়ি সফরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরাজ্যে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু হয় না। এরাজ্যে একটাই বঙ্গ, তা হল পশ্চিমবঙ্গ। তৃণমূলের অভিধানে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি রয়েছে, উত্তরবঙ্গ বলে কিছু নেই। ’
এদিন ধূপগুড়ির সভা থেকে সরাসরি বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ জানান অভিষেক। বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করে দেখান। যদি কড়ায়গন্ডায় জবাব না দিই তাহলে আমার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়।’ পাশাপাশি অভিষেক এও বলেন যে, বাংলাকে ভাগ করার দাবি আসলে পুরোটাই একটা চক্রান্ত। এদিন শুধু বাংলা ভাগ প্রসঙ্গই নয়, আরও নানা ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করেন অভিষেক।
নাম পরিবর্তন নিয়ে সমস্যার কারণে একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এই অভিযোগও রাজ্যের তরফে বারবার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে এদিন অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে, ‘যে প্রকল্পটা বাংলায় চলছে, তা কেন বাংলা আবাস যোজনা হবে না?’ তিনি এও বলেন যে, ‘মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের টাকার অপেক্ষা করেন না, মানুষের জন্য যা করার তিনি করবেন।’
এদিন অভিষেক বলেন, ‘রাস্তায় আসার সময়ে একটা হাট ঘুরে দেখলাম। মানুষজন তাদের মতামত, দাবির কথা জানালেন। দেখলাম মানুষের মধ্যে আজও তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে উন্মদনা রয়েছে। আমার বলতে বাধা নেই যে মানুষ তৃণমূলের জন্য দরজা খুলে বসে রয়েছে। আমরা ওদের কাছে পৌঁছতে পারছি না। সেই জায়গাটা নিচ্ছে বিজেপি। যারা তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন তাঁদের কাছ আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।
এখন নির্বাচন নেই। আমি ভোট চাইতে আসিনি। তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের পাখি নয়। আমি বারেবারেই বলেছি বহিরাগতরা আসে, বহিরাগতরা যায়। বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে ভোটের জন্য যারা উত্তরবঙ্গে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিল তাদের এই ১৪ মাস পরে আর দেখা নেই। কিন্তু পাশে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা স্পষ্ট বলেছেন, আপনার দুঃখে আপনার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে তৃণমূল কংগ্রেস।’
উল্লেখ্য, এদিন সকালে ধুপগুড়ির দোমহনী এলাকার একটি কালীমন্দিরে গিয়ে পুজো দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সেখানকার এলাকার বাজার ঘুরে দেখেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানতে চান। এরপর সেখান থেকেই যোগ দেন কর্মিসভায়।