বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ মরণাপন্ন রোগী বা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মানুষের মুখে মুখ রেখে শ্বাস দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর কথা প্রায়শই শোনা বা দেখা যায়। আবার কিছুদিন আগেই এক বানরের মুখে মুখ ঠেকিয়ে শ্বাস দিয়ে তাঁকে বাঁচানোর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু তা বলে সাপ! এভাবে সাপের প্রাণ বাঁচানোর কথা শোনা তো দূর কল্পনাও করা যায় কি?
কিন্তু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন কাণ্ডই ঘটিয়েছেন জলপাইগুড়ির এক পরিবেশকর্মী। একটি নয়, দু- দুটি সাপের মুখে মুখ ঠেকিয়ে শ্বাস দিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, শনিবার বেলার দিকে জলপাইগুড়ির কলেজপাড়ার এক বাসিন্দার ঘরে আচমকাই দুটি কমন উলফ স্নেক ঢুকে পরে। স্থানীয়ভাবে যা চালচিতি বা চিতিবোড়া সাপ নামেই পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাপ দুটিকে দেখেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন। কিছু না বুঝেই, আতঙ্কে সাপ দুটির গায়ে তাঁরা ফিনাইল ছিটিয়ে দেন। এদিকে, প্রাণে বাঁচতে সাপ দুটি দরজার পাশে থাকা একটি ভাঙা অংশের ভিতরে আশ্রয় নেয়। বেশ কিছুক্ষণ সাপ দুটিকে বার করতে না পারায়, খবর দেওয়া হয় পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরীকে।
এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান বিশ্বজিৎ চৌধুরী। প্রথমে সাপ দুটিকে তিনি দরজার ভাঙা অংশ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে ফিনাইলের কারণে সাপ দুটি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। সাপ দুটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিশ্বজিৎ চৌধুরী চটজলদি সিদ্ধান্ত নেন, ওই সাপ দুটির মুখে মুখ ঠেকিয়ে শ্বাস দেওয়ার। অর্থাৎ সাপগুলির হৃদযন্ত্রকে সচল রাখতে মাউথ-টু-মাউথ রেসপিরেশন দেওয়া। যেমন ভাবা তেমন কাজ করেন বিশ্বজিৎবাবু।
একে একে সাপ দুটির মুখ নিজের মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে ক্রমাগত ফুঁ দিতে শুরু করেন তিনি। এভাবে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় সাপ দুটির অবস্থা স্বাভাবিক হয় কিছুটা। এরপর তাদের শরীরের বিষক্রিয়া কাটাতে জলে কস্টিক সোডা গুলে তা দিয়ে সাপ দুটির গা ভাল করে ধুয়ে দেন। তারপর ঠাণ্ডা জায়গায় সাপ দুটিকে রেখে দেন। ঘণ্টা দুই পর দেখা যায় যে, সাপ দুটি আবারও ভালোভাবে নড়াচড়া করছে। এরপরই তাদের উপযুক্ত জায়গায় ছেড়ে দেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছে, ‘একে তো বর্ষাকাল। এই সময়টা সাপের প্রজননের সময়। তবে বর্তমানে যেভাবে গাছপালা, ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে বাড়ি-ঘর তৈরী হচ্ছে, এতে সাপেদের বাসস্থানের অসুবিধা হচ্ছে। সাপ তাই বাড়ির ঘরে ঢুকে যায়।’ পাশাপাশি তিনি অনু রোধ করেছেন, যাতে সাপকে যাতে কেউ আঘাত না করে।