চেষ্টা থাকলে উপায় হয়! দিনে দিনে এই প্রবাদকে সত্যি প্রমাণিত করেছেন বহু মানুষ। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, পুঁথিগত বিদ্যাটাই সব নয়। বরং পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও জ্ঞান আরোহন করা যায়। আর সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বৃহৎ কিছুও করে ফেলা সম্ভব। এমনই আরেক উদাহরণ হলেন রাজস্থানের এক মহিলা। পুঁথিগত বিদ্যা নেই। কিন্তু টেকনিক জ্ঞান তুখোড়। আর তা কাজে লাগিয়েই লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছেন তিনি। এমনকি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও।
রাজস্থানের এই কৃতী মহিলার নাম সন্তোষ পাচার। পুঁথিগত বিদ্যার দিক থেকে তিনি মাত্র ক্লাস এইট পাশ। তবে বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়িত করলেন তিনি? জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে নিজের স্বামীর সঙ্গে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি কাজ শুরু করেছিলেন সন্তোষ পাচার নামে ওই মহিলা। মূলত গাজর এবং অন্যান্য শাকসবজি চাষ করতেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের চাষ করা গাজর অন্যান্য চাষীদের তুলনায় গুণগত মানে যেন পিছিয়ে পড়ত। তাই বিক্রিবাটাও তেমন হত না। দিন-আনি-দিন-খাই করেই চলত সংসার।
কিন্তু তবুও হাল ছাড়েননি সন্তোষ পাচার ও তাঁর স্বামী। চাষ সংক্রান্ত জ্ঞান বাড়ানোর জন্য সরকার আয়োজিত একটি কর্মশালায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন তাঁরা। নিজেদের ভুলত্রুটি সামলে নতুনভাবে চাষ শুরু করেন। কিন্তু তাতেও সাফল্য থাকে অধরা। এই সময় সন্তোষ চাষের ক্ষেত্রে অন্য এক টেকনিকের সাহায্য নেন। গাজরের বীজের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘি এবং মধু মিশিয়ে তা সরাসরি সূর্যের আলোয় শুকিয়ে সেই বীজ তিনি মাটিতে পুঁতে চাষ শুরু করেন। আর তাতেই কেল্লাফতে!
নতুন এই পদ্ধতিতে চাষ করার পর যে গাজরের ফলন হয়, তা আকারে যেমন বড় তেমনই মিষ্টি! ফলে বাজারে হুহু করে বিক্রি হতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে চাহিদাও। আর এই বিপুল চাহিদা পূরণেই এবার এই পদ্ধতি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সন্তোষ ও তাঁর স্বামী। দুজনে মিলে চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে চাষ করে শুরুর দিকে মাসে দেড় লক্ষ টাকা রোজগার করেছেন সন্তোষের পরিবার। ৭০০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তারা।
ক্লাস এইট পাশ এই মহিলার চাষের পদ্ধতি ধীরে ধীরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। নতুন কিছু শিখে এবং উদ্ভাবনী বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে তিনি যেভাবে এই চাষ করে নতুন দিশা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই কৃতিত্বের জন্য সন্তোষ পাচার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর চাষের পদ্ধতি এখন দিগন্তবিস্তৃত।