আজকের বিশ্বে, নারীরা সব ক্ষেত্রেই নিজেদের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে। পুরুষদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজেদের কৃতিত্ব প্রমাণ করেছে মহিলারা। জীবন সংগ্রামের লড়াইতেও কোনও অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরা। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল আরেক মেয়ের হার না মানা লড়াইয়ের কাহিনী। যাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে নেটমহল।
বালাঘাট জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম লিঙ্গার বাসিন্দা পুনম মেশরাম। বয়স আর কতই বা হবে! তবে এই বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি অটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। পরিবারে প্রথম থেকেই পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা! পুনমের বাবার একটি নিজস্ব অটো রয়েছে, সেটা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা দিয়েই চলে সংসার। কিন্তু তা দিন গুজরানের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বাধ্য হয়ে শুরু হল পুনমের লড়াই!
বাবাকে কষ্ট করতে দেখে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেনি পুনম। চোখে তাঁর স্বপ্ন উচ্চশিক্ষার। জীবনে অনেকটা বড় হতে চায় সে। কিন্তু সংসারে যে বড়ই অভাব! তাই পড়াশুনার পাশাপাশি ‘পার্ট টাইম’ অটো চালানো শুরু করে পুনম। যাতে সংসারের জন্য অতিরিক্ত উপার্জনের পাশাপাশি উঠে আসে তার লেখাপড়ার খরচও। আর এখন তার উপার্জনেই এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে পরিবার।
চোখে বিরাট স্বপ্নের জাল বুনছিলেন পুনম। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে কিছু করতেই হত! লকডাউনের কারণে বেশ সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল পরিবারকে। এদিকে পরিবারে তখন একমাত্র উপার্জনকারী বাবা। তাঁরও বয়স হয়েছে। একা একটানা অটো চালিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। ঠিক সেই কারণেই বাবার পাশে এসে দাঁড়ায় পুনম। বাবার অটো এবার নিজেই চালাতে শুরু করে মেয়ে।
পুনম জানিয়েছেন, তার অটোতে শুধু মহিলারাই নয়, পুরুষরাও যাতায়াত করেন। সবাই তার এহেন উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন। পুনমের বাবা সতীশ মেশরামও মেয়ের এই চেষ্টায় গর্বিত। তাঁর কথায় পুনম ছিল বলেই সংসারের আয় বেড়েছে। পরিবারের অবস্থারও উন্নতি হয়েছে।
তবে অটো চালিয়ে সংসার বাঁচানোর চেষ্টার মাঝেই নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যটা কিন্তু এখনও অটুট পুনমের। আর তাই অটো চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে। পুনম দ্বাদশ শ্রেণি পাস। পাশাপাশি সে কম্পিউটার ও ট্যালিও শিখেছে। এখন কলেজে পড়াশুনা করছে পুনম। তার ৫ বোন রয়েছে এবং তারাও লেখাপড়া করছে। পুনমের আশা, নিজের এবং বোনেদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার! তাঁর এই আশা পূরণের প্রার্থনায় এখন গোটা নেটদুনিয়া।