বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অ-গান্ধী কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের নয়া সভাপতি নির্বাচিত হলেন। আজই ফল ঘোষণা হল। সামনে এল বহু প্রতীক্ষিত কংগ্রেস সভাপতির নাম। লড়াই ছিল মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে শশী থারুরের। শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। তবে, একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে, নির্বাচনে জিতবেন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ খাড়গেই। আর বাস্তবেও তাই হল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই ফল প্রত্যাশিতই ছিল। এদিকে, সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি পদে খাড়গেকে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
৭ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে এই নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা খাড়গে। দীর্ঘ ২৪ বছর পরে গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসছেন। গত ১৭ অক্টোবর দেশজুড়ে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা নতুন সভাপতি নির্বাচনে তাঁদের ভোট দেন। সেই সব ব্যালট বাক্স দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতরে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়৷ এরপর আজ সকাল ১০ টা থেকে সেখানেই ভোট গণনা শুরু হয়। এদিন সকাল থেকেই ভোট গণনার প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে।
এদিন ভোট গণনার পর দেখা যায় যে, সভাপতি নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ প্রার্থী হিসাবে পরিচিত খাড়গে পেয়েছেন ৭৮৯৭টি ভোট। আর অন্যদিকে প্রতিপক্ষ শশী থারুর পেয়েছেন ১০৭২টি ভোট। মল্লিকার্জুন খাড়গে নির্বাচনে ৬ হাজার ৮২৫ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন। এদিন জয়ের পর দলের নেতাদের থেকে পেয়েছেন শুভেচ্ছাবার্তা। উল্লেখ্য এদিন সোনিয়া গান্ধী নিজেই ১০ রাজাজি মার্গ অর্থাৎ খাড়গের বাড়ি গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় বিস্মিত ওয়াকিবহাল মহল। কেননা এই ঘটনা কংগ্রেসের চিরাচরিত রীতিনীতি থেকে একেবারেই পৃথক। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খাড়গে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এর মধ্যেই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাবার্তাও।
প্রধানমন্ত্রী টুইট করে জানিয়েছেন ‘কংগ্রেস সভাপতি পদে নতুন দায়িত্ব পেলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল। আগামী দিনে তিনি যেন কার্যকরী মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন, সেই শুভেচ্ছা জানাই।’
বুধবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হলেও, ২৬ তারিখ থেকে দলের সভাপতি পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর জায়গায় বসবেন। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসে সভাপতি পদের জন্য শেষবার ভোটাভুটি হয় প্রায় ২২ বছর আগে। কংগ্রেসের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে এই নিয়ে ষষ্ঠবার সভাপতি নির্বাচন হল। ২০০০ সালে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন জিতেন্দ্র প্রসাদ। প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতে যান সোনিয়া। ২০১৭ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের সভাপতি নির্বাচিত হন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের পরই পদত্যাগ করেন রাহুল গান্ধী। তারপর থেকে সভাপতি পদে দলের দায়িত্বভার ছিল সোনিয়া গান্ধীর কাঁধেই। এদিন প্রধানমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়গেকে শুভেচ্ছা জানালেও, পদ্ম শিবিরের অন্যান্য নেতারা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বিজেপি নেতা রাজ্যবর্ধন রাঠৌর তোপ দেগে বলেছেন, কংগ্রেসের এই নির্বাচন ‘প্রতারণা এবং নাটক’ ছাড়া কিছুই নয়।
এই নির্বাচন নিয়ে হিন্দিতে করা টুইটে রাঠৌর লিখেছেন, ‘শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী অত্যন্ত দরকার। দীর্ঘসময় পর কংগ্রেস একটি পরিবারের বাইরে তাকাল। কিন্তু, তারা স্রেফ রবার স্ট্যাম্প খুঁজে নিয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন স্রেফ ভাঁওতাবাজি ও নাটক ছাড়া কিছুই না।’
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানালেও, দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বংশবাদী রাজনীতির অভিযোগ সরব হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী নিজেও। আরএসএসও তার অনেক আগে থেকে এই অভিযোগ করে এসেছে। কিন্তু, সেভাবে দেখতে গেলে, অ-গান্ধী পরিবারের কেউ এবার কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ায়, আরএসএস ও বিজেপির সেই অস্ত্র এবার অনেকটাই অকেজো হয়ে গেল।