বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ শিবসেনার দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের মূল্য চোকাতে হয়েছে কংগ্রেস এবং এনসিপিকে। সেই সঙ্গে পতন হয়েছে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপি জোটের মহা বিকাশ আগাড়ি সরকারের। রাতারাতি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী মুখ পালটেছে। শিবসেনা প্রধানের জায়গায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন শিবসেনার বিদ্রোহী নেতা একনাথ শিন্ডে। উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন একনাথ। তাঁর পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদে দায়িত্ব নিয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ।
এদিকে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সিংহাসনে বসার পরে এই প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন একনাথ শিন্ডে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে জানালেন কেন উদ্ধব ঠাকরের মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়ে এলেন তিনি? কেনই বা বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধলেন? শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা দখলের জন্যই কি তাঁর অনুগামী বিধায়কদের নিয়ে কংগ্রেস ও এনসিপি জোট ছাড়লেন? উত্তর দিয়েছেন এই প্রশ্নেরও।
যে থালায় খেয়েছেন, সেই থালাতেই শেষপর্যন্ত ফুটো করলেন তিনি? মহারাষ্ট্রের সদ্য হওয়া মুখ্যমন্ত্রী একনাথের দিকে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন উদ্ধব ঠাকরের সমর্থকরা। এই প্রশ্নের জবাবে মুখ খুললেন একনাথ শিন্ডে। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের বিধায়করা বহুদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। তাঁদের সংবিধান মেনে কাজ করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছিল। আর্থিক ফান্ডের অভাবে উন্নয়নমূলক কাজও করতে পারছিলেন না কেউ। সেই কারণেই তাঁরা সকলে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। একাধিকবার উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। মহা বিকাশ আগাড়ি জোটের থেকে আমরা কিছু পাইনি। নগর পঞ্চায়েত ভোটেও আমরা চতুর্থ স্থানে শেষ করেছি। এরপরেও উদ্ধবকে বোঝানো সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও বেআইনি কাজ করিনি। সংবিধান মেনে কাজ করবে মহারাষ্ট্রের নয়া সরকার। আমাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি বিধায়ক আছে। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত আইনি পথেই নেওয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল, তাঁরাই শীর্ষ আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছে।’
অন্যদিকে, এদিন একনাথকে গেরুয়া শিবিরের হয়েও কথা বলতে দেখা গেল। এদিন একনাথ শিন্ডে বলেন যে, ‘বিজেপি সর্বদাই ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কাণ্ড ঘটায়, এই ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছে। আদতে তা সত্য নয়। আমাদের থেকে বেশি সংখ্যক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ দয়া হয়েছে। বিজেপির লক্ষ্য হিন্দুত্বএবং উন্নয়ন। আমাদেরও লক্ষ্য তাই।’ তাঁর কথা অনুযায়ী, বিজেপি এবং একনাথ শিবিরের ভাবনা এক হওয়ায় বিজেপির সঙ্গে তাঁদের জোট সরকার গঠিত হয়েছে।
একনাথ জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বিশেষ পরামর্শও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী একনাথের কথায়, ‘আমায় সত্যের পথে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের পাশে আছে। এটা অনেক বড় বিষয়। নির্বাচনের আগেও ওঁদের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল। ২০১৯ সালে বিজেপির সঙ্গে আমরা লড়াই করলেও, সরকার গঠন করেছিলাম কংগ্রেস এবং এনসিপি জোটের সঙ্গে। সেই জন্যই হিন্দুত্ব, সাভারকার, মুম্বই বিস্ফোরণ, দাউদ ইব্রাহিমের মতো ইস্যুগুলি সামনে থাকার পরেও আমরা কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’
এখানেই শেষ নয়, এরপরই একনাথ উদ্ধব ঠাকরেকে কটাক্ষ করে বলেন যে, ‘মার্সেডিজকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অটো। আর তাই এটা সাধারণ মানুষের সরকার। প্রতিটা সাধারণ মানুষকে নাগরিক পরিষেবা দিতে আমরা দায়বদ্ধ। এটাই উদ্ধব ঠাকরে সরকার আর নতুন সরকারের মধ্যে পার্থক্য।’