আর মাস দুয়েক পরই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো। আর পুজো মানেই মহালয়া৷ আর মহালয়ার কথা উঠলেই বাঙালির কানে ভেসে আসে সেই উদাত্ত কণ্ঠ- "আশ্বিনের শারদপ্রাতে জেগে ওঠে আলোকমঞ্জীর"! মহালয়ার দিনে এই কণ্ঠ শুনেই ঘুম ভাঙে বাঙালির৷ আর বাঙালির এই অন্যতম প্রিয় কণ্ঠের অধিকারী যিনি, আজ তাঁরই জন্মদিন!
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র! এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বকে ছাড়া যেন মহালয়াই অসম্পূর্ণ! ১৯০৫ সালে আজকের দিনে আহিরীটোলায় জন্ম তাঁঁর৷ বাবা পরাধীন ভারতের অন্যতম রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র পেশায় ছিলেন ভাষাতত্ত্ববিদ ৷ তবে ঠাকুরমা যোগমায়া দেবীর কাছেই বীরেনবাবুর প্রথম সংস্কৃত শিক্ষা ৷ বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন থেকেই শুরু চণ্ডীপাঠ ৷ সেই সময় থেকেই তাঁর কণ্ঠের তারিফ শোনা যেত। পাশাপাশি স্মৃতি শক্তিও ছিল প্রখর ফলে কোনও নতুন কিছু শিখতেও বেশি সময় লাগত না।
বীরেনবাবুর কর্মজীবনের শুরু যদিও রেডিও থেকে নয়। ১৯২৮ সালে রেলের সদর দপ্তরে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে রেডিওর প্রতি আগ্রহও সেই তখন থেকেই৷ রেডিওতে একাধিক বন্ধু ছিলেন তাঁর৷ পরে পরশুরামের লেখা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র পরিচালিত নাটক ‘চিকিৎসা সংকট’ রেডিওতে সম্প্রচারিত হওয়ার পরই ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে শুরু করেন তিনি।
রেডিওতে সে সময় বাণী কুমার ভট্টাচার্য, পঙ্কজ কুমার মল্লিকদের মতো নামীদামী ব্যক্তিত্ব। তাঁদের দলেই এরপর নাম লেখালেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। রেডিও পেল তাঁর এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নক্ষত্রকে। রেডিওতে যোগদানের পর দু`ঘণ্টার সঙ্গীত আলেখ্যর অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দ্দিনীতে যোগ দেন বীরেনবাবু৷ তবে যে চণ্ডীপাঠ বাঙালির মননে গাঁথা তার শুরু আরও পরে।
সেসময় সুর করে চণ্ডীপাঠের প্রচলন তেমন ছিল না। তবে বীরেনবাবু একদিন নিজের সুরেলা কণ্ঠে `মহিষাসুরমর্দ্দিনী` কথ্য এবং চণ্ডীপাঠ করতে শুরু করেন। খানিক মজার ছলেই তিনি শুরু করেছিলেন কিন্তু তা শুনেই বাণীকুমার মুগ্ধ হয়ে যান। ব্যাস! তারপরই মহালয়া ভোরে চণ্ডীপাঠের দায়িত্ব এসে পড়ল বীরেনবাবুর কাঁধে। সৃষ্টি হল এক ইতিহাস!
বাঙালিকে নিজের কণ্ঠের মাধ্যমে মোহিত করে দেওয়া এই মানুষটি পরলোক গমন করেন ১৯৯১ সালে। তবে তিনি আজ না থাকলেও তাঁর কণ্ঠ আজও প্রতিটি বাঙালির কানে বাজে। বাঙালির কাছে মহালয়ার অন্যতম সমার্থক শব্দই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। আজ এই মহান কিংবদন্তির ১১৬ তম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য৷