আজ কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমারের জন্মদিন। প্রবাদপ্রতিম এই সঙ্গীতশিল্পী আজ পা দিলেন ৯৩তম জন্মবার্ষিকীকে। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে একপ্রকার কিংবদন্তিই বলা চলে তাঁকে। তিনি সুরের জাদুকর। টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মনে বিরাজ করেছেন তিনি। সেই আবেদন আজও অটুট।
প্রথাগত তালিম না থাকা সত্ত্বেও কন্ঠের আবেদনে সঙ্গীতাকাশের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠেছিলেন কিশোর কুমার। কেরিয়ার শুরু মুম্বইয়ের বম্বে টকিজে কোরাস গায়ক হিসাবে। ১৯৪৮ সালে `জিদ্দি` ছবিতে প্রথমবার প্লেব্যাকের সুযোগ। যদিও এরপরই আসে নানা বাধা-বিপত্তি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম না থাকায় বিমল রায় পরিচালিত `নকরি` ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ হারান কিশোর। তবে পরে সুরকার সলিল চৌধুরীর দৌলতে ফের গানের সুযোগ আসে তাঁর।
শুধু সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে অন্যতম সাফল্যই নয়, ভারতীয় গায়কীতে বিভিন্ন বিদেশী স্টাইলের আমদানিও হয়েছিল কিশোর কুমারের হাত ধরেই। স্কেটিং, ইয়োডলিং-এর মতো টেকনিক নিয়ে এসেছিলেন তিনিই। নিজের অনন্য গায়কী তৈরি করতে তিনি শিখেছিলেন ইয়োডলিং। ভারতীয় সঙ্গীতে তিনিই প্রথম আনেন এই স্টাইল। কিশোর কুমার ছাড়া সেই সময়ের আর কোনও শিল্পীই ইয়োডলিং করতেন না। আর সেই গায়কীর মাধ্যমেই মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়াতেন তিনি।
তবে এ কথা জানেন কি, মঞ্চ কাঁপানো এই গানের জাদুকর একসময় স্টেজে উঠতেই ভয় পেতেন! আর তাঁর সেই ভয় কাটিয়েছিলেন রাহুল দেব বর্মণ ওরফে পঞ্চম দা! শোনা যায়, একবার খোলা মঞ্চে গান গাওয়ার জন্য কিশোর কুমারের ডাক পড়েছে। সঙ্গে রয়েছেন আর ডি বর্মণ, লতা মঙ্গেশকরের মতো তারকাও। স্বভাবতই এমন তারকাদের একসঙ্গে দেখতে উপচে পড়ছে শ্রোতাদের ভিড়। এদিকে অত লোক দেখে স্টেজে ওঠা মাত্রই ভয়ে ফের পর্দার আড়ালে চলে যান কিশোর কুমার।
ঠিক সেই মুহূর্তেই তাঁকে পাকড়াও করেন পঞ্চম দা। তিনি না থাকলে হয়তো পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েই যেতেন কিশোর কুমার। তবে পঞ্চম দা এসে তখন কিশোর কুমারকে শান্ত করেন। তাঁকে সাহস জোগান। বলেন, "আরে ভয় পাচ্ছ কেন? দর্শকদের মধ্যে কেউ থোড়াই কেউ লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁশলে, এস ডি বর্মন, কিশোর কুমার?" তা শুনে কিশোর কুমারও ভাবলেন, `সত্যিই তো! আমি বৃথাই ভয় পাচ্ছি!` আর তারপরই মঞ্চে উঠে গান গাইতে শুরু করেন।
এরপর পরবর্তীকালে যতবার তিনি স্টেজে উঠেছেন পঞ্চম দার ওই কথাই অনুপ্রেরণা জোগাত কিশোর কুমারকে। আর সমস্ত ভয় জয় করে গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দিতেন তিনি। আর তাঁর গাওয়া সেই সব গান আজও জনপ্রিয়তার শিখরে। সব ধরণের গায়কীতেই কিশোর কুমার ছিলেন অনবদ্য। তাই তাঁর মৃত্যুর তিন দশক পরেও তিনি সমান সমাদৃত। এই অনন্য শিল্পীকে জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য।