বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে ইডি। পাশাপাশি পার্থ ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন ইডির আধিকারিকরা। গত শনিবারই পার্থর পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় অর্পিতাকেও। ১০ আগস্ট পর্যন্ত উভয়কেই ইডির হেফাজত দিয়েছে আদালত। এরই মধ্যেই আবার অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেও কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলেই দাবি করছেন।
এদিকে, দলের যাবতীয় পদ থেকে শুরু করে মন্ত্রিত্ব থেকেও অপসারণ করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। অপসারণের পর এদিন তিনি ফের মুখ খোলেন। এদিন ফের রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও। এদিন হাসপাতালে ঢোকার সময় বলেছিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। আর বেরোনোর সময় বলে দিলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র করেছে, জানতে পারবেন।’ এরপরই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে নিয়ে দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ঠিক কিনা? পার্থর জবাব, ‘দলের সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, তা সময় বলবে।’ এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও জানিয়ে দিলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির সিদ্ধান্ত ঠিক।’
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এমনকি ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে যারা আছেন তাঁদের নাম জানা যাবে বলে তিনি দাবি করেছেন। এদিকে, পার্থর মন্তব্যে দলের মধ্যে অস্বস্তি বাড়লেও, তৃণমূলের নেতারা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব মানতে নারাজ। বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও পার্থর এই তত্ত্ব মানতে রাজি নয় একেবারেই।
এদিন দিল্লি থেকে ফিরে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ষড়যন্ত্রের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি শুনেছি। কিন্তু এ কথার কোনও মানেই হয় না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রত্যক্ষভাবে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ মহিলার থেকে অনেক টাকা উদ্ধার হয়েছে। ওনাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, দল থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। যা হয়েছে তার জন্য উনি নিজেই দায়ী। ষড়যন্ত্র আবার কী?’
অন্যদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে সৌগত রায়ের আগেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দুই তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং তাপস রায়। তাঁদের মন্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, তাঁরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে মানছেন না একেবারেই। উল্টে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের দায় তাঁর উপরই ছেড়ে দিয়েছে দল।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সব দিক খতিয়ে দেখে দল গতকাল যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েছে৷ এখন কোনও মন্তব্যের উপরে আলাদা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মানে নেই৷ কেউ যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন প্রথম থেকেই তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করবেন৷ এখন ছ-সাত দিন পরে বলছেন৷ আইনি লড়াই তো চলছে৷ সেখানে নিজের বক্তব্য জানানোর পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ কাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তার উপরে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই৷’
এরপর এদিন সন্ধ্যায় ফের একই কোথা শোনা গেল কুণাল ঘোষের গলায়। তিনি বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এখন অখণ্ড অবসর। জেরার ফাঁকে কালের সিদ্ধান্তের কথা ভাবুন। যেখানে এক সময় তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন অনেক কিছু, সেগুলো যথাযথ সিদ্ধান্ত কিনা ভাবুন। উনি অনেক সময় পেয়েছেন মিডিয়ার সামনে এই কদিনে। তিনি নিজেকে নির্দোষ বলেননি কেন? ষড়যন্ত্র বলেননি কেন? অর্পিতার চোখের জল দেখে আমি কী করব? আমি কি মোছাতে যাব?’