বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কলকাতা শহরে ফিরলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আজ ভোরে কলকাতাগামী প্রথম বিমানে করে ভুবনেশ্বর থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে রওনা দেন ইডি-র আধিকারিকরা। এরপর কলকাতা পৌঁছে, বিমানবন্দর থেকে হুইলচেয়ারে বসেই বেরিয়ে আসতে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিবকে।
সেখান থেকে তাঁকে ইডি-র আধিকারিকরা নিয়ে যান সিজিও কমপ্লেক্সে। এদিকে, কলকাতা ফিরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। মঙ্গলবার ভোর ৫ টা বেজে ৪০ মিনিটের বিমানে চেপে সকাল ৬ টা ৩৪ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে পা রাখেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আজ কলকাতায় ফেরার সময় তাঁর সঙ্গে ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকদের পাশাপাশি ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গতকালই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজরুল মঞ্চে বঙ্গবিভূষণের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যি প্রমাণিত হোক। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড। যে মহিলার বাড়িতে টাকা উদ্ধার হয়েছে, দলের সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। সরকারের সাথেও নেই। কেউ দোষ করে থাকলে, সে নিজে তার দায়িত্ব নেবে। কেউ চোর, ডাকাত হলে তৃণমূল রেয়াত করে না।’ এদিন এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় খুব সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলেন, ‘ঠিকই বলেছেন।’
এদিকে, ইডি সূত্রে খবর, আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিনের ইডি হেপাজতে থাকতে হবে। গতকাল ভুবনেশ্বরে নামার পর সাংবাদিকরা বারবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে মুখে কিছু না বলে, তিনি ঘাড় বাঁদিকে হেলিয়ে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় বুকে হাত দিয়ে ব্যথা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। এরপর হুইলচেয়ার থেকে নেমে হেঁটেই অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী এবং এসএসকেএম হাসপাতালের এক চিকিৎসক। এছাড়াও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন ইডি-র আধিকারিকরাও। ভুবনেশ্বরের AIIMS-এ ভর্তি নেওয়া হয়নি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট গতকালই তুলে দেওয়া হয় পার্থর আইনজীবীকে। পাশাপাশি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ইডির তদন্তকারী অফিসারকেও।
সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষার পর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভুবনেশ্বর AIIMS। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মন্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তাঁকে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। ভুবনেশ্বরের AIIMS-এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিছু ক্রনিক অসুখে ভুগছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর জন্য ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। এমনিতেই তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ওষুধ খাচ্ছেন। ভুবনেশ্বরের AIIMS-এর অধিকর্তা আশুতোষ বিশ্বাস গতকাল এ বিষয়ে জানিয়েছেন যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ ঠিকই। কিন্তু তার জন্য ওষুধ খেতে হবে। ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই।
ভুবনেশ্বরের AIIMS-এ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইসিজি, ইকো, ইউএসজি করা হয়েছে। হার্টের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পার্থ। এদিন ভুবনেশ্বরের AIIMS-এর প্রাইভেট ওয়ার্ড ওয়ানের ১০ নম্বর বেডে রাখা হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর প্রথমে তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কার্ডিওলজি-সংক্রান্ত নেফ্রোলজি, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ৪ জনের মেডিক্যাল টিম।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ, পালস রেট পরীক্ষা করার পর তিনি কোনও অসুখে ভুগছেন কিনা জানতে চেয়েছিলেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেসব শারীরিক সমস্যার কথা জানিয়েছেন, তার জন্য তিনি কোনও ওষুধ খান কিনা, খেলে কী ওষুধ খান, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল বলেই খবর। এরপর অবশ্য ইডি-র পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, অনিবার্য কারণে তাঁকে কলকাতায় ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। একদিন হাসপাতালে রেখে মঙ্গলবার ভোরেই ফিরলেন পার্থ।