বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে এদিন গ্রেফতার করা হল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শুক্রবার থেকে দীর্ঘক্ষণ রাজ্যের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করেন ইডি-র আধিকারিকরা। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে আসেন ইডি-র আধিকারিকরা। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আর্থিক লেনদেন নিয়ে অভিযান চালায় ইডি। এরপর পার্থর নাকতলার বাড়িতে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকাল ১০ টা নাগাদ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।
ইডি-র তরফে অভিযোগ টাকার উৎস নিয়ে বারবার বয়ান বদলেছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও রয়েছে। এরপরই শিল্পমন্ত্রীর গ্রেফতারির সম্ভবনা জোরালো হয়। জানা গিয়েছে, আজই তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ। সারা রাতই মন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন ইডি-র আধিকারিকরা। রাজ্য শিক্ষিক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়। এই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে একাধিক ব্যক্তির। সেই তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামও। কলকাতা হাইকোর্টে চলা এই মামলায় আগেই সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাহিনী সঙ্গে নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর বাড়িতে ঢোকেন ইডি-র আধিকারিকরা। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুরো বাড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এমনকি শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছেই মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়ক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন নিয়ে নেন ইডি-র আধিকারিকরা।
এর মাঝেই টানা জিজ্ঞাসাবাদের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আইনজীবী বাড়িতে চিকিৎসকদেরও ডাকেন। এসএসকেএম থেকে চিকিৎসকরা এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইসিজি-র পরামর্শও দিয়েছিলেন গতকাল। সূত্রের খবর, দুবার তাঁর বাড়িতে যান চিকিৎসকেরা। এরপরও থামেনি জিজ্ঞাসাবাদ।
ইডি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গতকাল রাজ্যের মোট ১৩ টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। এর মধ্যে টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসন থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী তথা মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২০ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ২০০০ এবং ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল। এছাড়াও ওই বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও পাওয়া গিয়েছে বলে ইডির দাবি। যে পরিমাণ নগদ পাওয়া গিয়েছে, তা ব্যাঙ্ককর্মীদের দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে গোনা হয়। ইডি সূত্রের খবর, ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, ইডি-র আরও দাবি যে, প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে ও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই সমস্ত নিয়োগ করা হয়েছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন মণীশ জৈন। প্রাথমিকভাবে নথি সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ করে তা যাচাই করা হয় বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাম জমানায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রথম সারির অন্যতম নেতা হিসেবেই তাঁর পরিচিত। শিক্ষা দফতর, শিল্প দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তৃণমূল শিবিরেও তাঁর জায়গা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব তিনি। তাই তাঁর এই গ্রেফতারি রাজ্য তথা শাসকদলের কাছে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।