বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ গতকালই সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে পেট্রোপণ্যের দামে ভ্যাট না কমানো নিয়ে অ-বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিশানা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে বাংলা-সহ অন্যান্য বিরোধীদল শাসিত রাজ্যগুলির উপর দায় চাপান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘুরিয়ে তিনি বলেন, নভেম্বর মাসে যখন কেন্দ্র সরকার পেট্রল এবং ডিজেলের এক্সাইজ ডিউটি কমিয়ে দিয়েছিল, সেসময় যে রাজ্যগুলি ভ্যাট কমায়নি, সেই রাজ্যগুলির সরকার, তাঁদের নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে এও অনুরোধ জানিয়েছেন যে, ৬ মাস আগে যেসব রাজ্য এটা করেনি, সেইসব রাজ্য যেন এখন পেট্রোল-ডিজেলের ভ্যাট কমায়।
গতকালই প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাজ্যের বকেয়া ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আমাকে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিন। পরের দিন পেট্রোপণ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়ে দেব। আপনার রাজ্য ৫ হাজার দিয়েছে, আমি ১০ হাজার কোটি দেব।’ তিনি এও বলেছিলেন যে, পেট্রোপণ্যে রাজ্যের থেকেও ২৫ শতাংশ বেশি কর নেয় কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকার পেট্রোপণ্যে ৭৫ শতাংশ কর নেয় কেন্দ্র সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘তাহলে রাজ্য সরকার কীভাবে চলবে? কী করে চালাব?’ এবার ফের একবার জ্বালানি ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে একই ইস্যুতে মমতা বলেন, ‘দোষ নিজেদের ঘাড় থেকে ঝাড়ার চেষ্টা করছেন। দোষ হলে রাজ্যের দোষ!’ পাশাপাশি তিনি রান্নার গ্যাসের দাম অবিলম্বে ৩০০ টাকা কমানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গতকালের বৈঠকে কোভিড অ্যাজেন্ডা ছিল না। আরও বাড়বে। আসলে দোষ নিজেদের ঘাড় থেকে ঝাড়ার চেষ্টা করছেন। দাম বাড়াবে রাজ্যের পাওনা না দিয়ে। দোষ হলে রাজ্যের দোষ। যখন মানুষ দুর্ভোগে পড়বে, তখন দায় রাজ্যের। রান্নার গ্যাসের দাম অবিলম্বে ৩০০ টাকা কমানো উচিত। পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো উচিত।’
কেন্দ্রের মোদী সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, ‘মানুষের ভোগে থেকে ১৭.৩ লাখ কোটি টাকা আয় করেছে...চোদ্দবার দাম বাড়িয়েছে। সারা বিশ্বে যখন দাম কমেছিল, তখনও কেন দাম কমায়নি? ওদের একটা ফান্ড থাকবে, নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করবে দলের স্বার্থে...।’
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক ছিল প্রধানমন্ত্রী। দেশের কোভিড পরিস্থিতির বিষয়ে। দেশে ফের নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথভাবে কী করা উচিত সেই বিষয়ে আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক ছিল। এই বৈঠকে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আচমকাই আলোচনার মধ্যে জ্বালানির প্রসঙ্গ তুলে আনেন।
মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘করোনার এই বিশ্বজনীন সংকট মোকাবিলায়, কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয় আগের থেকে অনেক বেশি করে প্রয়োজন। আজকের কঠিন পরিস্থিতিতে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কোঅপারেটিভ ফেডারেলিজমের ভাবনা বজায় রাখতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্র সরকার এক্সাইজ ডিউটি কমিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যগুলির সরকারকেও আমরা অনুরোধ করেছিলাম তারাও যেন কর কমায়। কিছু কিছু রাজ্য ভারত সরকারের সেই ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে কিছু কিছু রাজ্য নিজেদের নাগরিকদের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। এটা শুধু ওই রাজ্যগুলির নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় নয়, পাশের রাজ্যগুলির মানুষের সঙ্গেও অন্যায়।’ নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলা, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানার নামও করেন।
অন্যদিকে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেন ফেরত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৬ জন পড়ুয়াকে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। ডেন্টাল পড়ুয়াদের একজন ডেন্টাল কলেজে ইন্টার্ন করার সুযোগ পাবেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের জন্য কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ করেনি।