বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। এবার অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রতর গ্রেফতারি নিয়ে এবার সিবিআই ও বিজেপিকে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বললেন, ‘কেষ্টর বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে সিবিআই’।
ভোর হলেই ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। তার আগে রবিবার বেহালায় এক প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ সেখানেই অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি ওই অনুষ্ঠান থেকে প্রশ্ন তোলেন, ‘কী করেছিল কেষ্ট?’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। এরপরই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনদিন ক্ষমতা বা পদ চায়নি অনুব্রত।’ তাঁর কথায়, ‘কেষ্টকে আমি অনেকবার বলেছি তুই এমএলএ হতে পারিস, এমপি হওয়ার পরামর্শও দিয়েছি। কিন্তু কোনওদিন ও রাজি হয়নি। রাজ্যসভার সাংসদ করতেও চেয়েছিলাম, তাতে রাজি হয়নি।’
এরপরই অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রীর প্রসঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গত ২ বছর কেষ্টর কীভাবে কেটেছে আমরা জানি। পঞ্চায়েত ভোটের সময় ওর বউ হাসপাতালে। আমাকে বলত, তোমার বউমা বলেছে ভোটের কাজ করতে।’
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গরু পাচারের এতো অভিযোগ। গরু তো আসে উত্তরপ্রদেশ থেকে। আমি তো বলেছি বর্ডার থেকে ঢুকতে দেব না। তারপরও কেন বর্ডার থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়? সেখানে তো থাকে বিএসএফ। দায়িত্ব তো অমিত শাহের। শুধু বাংলাকে দোষ দিলে, আর তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে রাতে লোক পাঠালেই হবে না।’
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুবই বিশ্বস্ত সৈনিক অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। ‘বেতাজ বাদশা’ বলা যায় অনুব্রত মণ্ডলকে। এক সানাম্য অষ্টম শ্রেণী পাশ পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ব্যক্তির বীরভূমের দাপুটে রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার যাত্রাপথটাও বেশ চমকপ্রদ। রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার সুবাদেই বোলপুরের নীচুপট্টিতে ছোট ঘর থেকে আজ তাঁর নীল রঙের প্রসাদোপম বাড়ি। বোলপুরে তো অবশ্যই এমনকি সারা বাংলায় তাঁর নাম জানেন না, এমন লোক প্রায় নেই বললেই চলে।
২০১১ সালের পর বাংলার রাজনীতিতে খুবই উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠে এই অনুব্রত মণ্ডল। এককথায় লালমাটির তৃণমূলের ভোট বাক্সের অন্যতম ভরসার নাম অনুব্রত। প্রথম থেকেই কংগ্রেস ঘরানায় মানুষ অনুব্রত মণ্ডল। পরে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত কর্মী হয়ে ওঠেন তিনি। একটা সময়ের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গরু, কয়লা ও বালি পাচার-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, প্রভাবশালী হিসেবে বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার, প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ওঠে। অবস্থা এমনই হয় যে, বিধানসভা নির্বাচনের দিন গৃহবন্দি রাখা হয় এই দাপুটে নেতাকে। এদিন সেই বিষয় নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, পরিকল্পনা করে তাঁর দলের নেতাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। রাতে তাঁদের বাড়িতেও তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী এও দাবি করেছেন, তাঁর বাড়িতেও হানা দিতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এদিন তিনি হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়ে বলেন, ‘আমি লড়ে নেব। হার মানব না।’