বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সামনেই রয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এই নির্বাচনে এনডিএ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা আদিবাসী মুখ দ্রৌপদী মুর্মু। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা অটল বিহারীর আমলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবিন্ত সিনহা। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয় শিবিরেই প্রস্তুতি তুঙ্গে। ইতিমধ্যেই উভয় পদপ্রার্থী নিজেদের মন্ন্যন পেশ করেছেন।
এদিকে, আজই কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রা উৎসবে যোগ দিয়ে এই নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জেতার সম্ভবনা অনেকটাই বেশি। আগে জানালে ভেবে দেখতাম।’ কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রার অনুষ্ঠানে সামিল হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন যে, যেহেতু সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধী দলগুলো প্রার্থী নির্বাচন করেছে, তাই সকলের সঙ্গে আলোচনা না করে, প্রার্থী প্রত্যাহার করা যাবে না।
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। আগে থেকে যদি বিজেপি জানাত যে, একজন তফশিলি, আদিবাসী মহিলাকে তাঁরা প্রার্থী করছে, তাহলে আমরাও চেষ্টা করতাম। বৃহত্তর স্বার্থে বিরোধী ১৬-১৭টা দল বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। সর্বসম্মতিতে একজন প্রার্থী হলে, তা দেশের পক্ষে ভাল হতো। এপিজে আব্দুল কালামও আগে হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি ফোনে কেবল আমাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। ওদের মতামত জানায়নি। বৃহত্তর স্বার্থে, সর্বসম্মত প্রার্থী আমি সর্বদা পছন্দ করি। কিন্তু যেহেতু আমরা ১৭-১৮টা দল একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সকলে না বললে আমি একা ফেরাতে পারি না। আমি চাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক।’
এদিকে, তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিরোধী ঐক্য নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনীতির অন্দরে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ১৫ জুন। ২৯ জুন ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এরপর ৩০ জুন মনোনয়ন খতিয়ে দেখা হয়। মনোনয় প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ জুলাই। চলতি মাসের ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর ২১ জুলাই রয়েছে ফল ঘোষণা। এরপরই দেশ পাবে, নয়া রাষ্ট্রপতি। চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদ শেষ হতে চলেছে রামনাথ কোবিন্দের।
এবারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অ-বিজেপি দলগুলিকে জোটবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই দিল্লিতে প্রথম বিজেপি বিরোধী দলগুলি বৈঠকে বসে। এই বৈঠকে মোট ১৮ টি অবিজেপি দল যোগ দেয়। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধী শিবির থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে। এরপর দ্বিতীয় বৈঠক ডাকেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিরোধী শিবির থেকে প্রার্থী হবেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। যদিও যশবন্তের আগেও কয়েকজনকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তাঁরা প্রার্থী হতে রাজি হননি। এরা হলেন, শরদ পাওয়ার, গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, ফারুক আবদুল্লা প্রমুখকে। কিন্তু সকলেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন। এরপরই যশবন্ত সিনহার নাম প্রার্থী হিসেবে স্থির হয় সর্বসম্মতিক্রমে।
এদিকে, অনেকের মদতেই এই নির্বাচনে জয়ের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছেন দ্রৌপদী মুর্মু। দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে দু-চার কথা, ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু। দৌপদী মুর্মুর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একজন শিক্ষিকা হিসেবে। দ্রৌপদী মুর্মু ওডিশার প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন এবং ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রায়রাংপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি এবং বিজেডি’র জোট সরকার থাকাকালীন তিনি মন্ত্রীত্ব সামলেছেন। তাঁর দায়িত্বে ছিল পরিবহণ, পশুপালন এবং মৎস্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। দৌপদী মুর্মু ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনিই ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল, যিনি রাজ্যপালের পাঁচ বছরের কার্যকালের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এবার আসা যাক কেন বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে বাছাই করল প্রার্থী হিসেবে সেই প্রসঙ্গে। উল্লেখ্য, চলতি বছরেই গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। আবার সামনের বছর অর্থাৎ ২০২৩-এ রয়েছে রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন। তাই তার আগে দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হলে, দ্দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি যে হবে, তাই শুধু নয়, গুজরাট- সহ একাধিক রাজ্য যেখানে আদিবাসী ভোটার রয়েছে, আগামী সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁদের ভোটও বিজেপির ঝুলিতেই যাবে। ঠিক যেমন হয়েছিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সময় ২০১৭ সালে। রামনাথ কোবিন্দ দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। সেই আবেগকে হাতিয়ার করেই ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে দলিত ভোটারদের ভোট টানতে পেরেছিল বিজেপি। মনোনয়ন দেওয়ার দিনই বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে সমর্থন প্রার্থনা করেছিলেন দ্রৌপদী।