বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সদ্য বিধানসভায় পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুকুল রায়। এদিকে, সূত্রের খবর, নতুন পিএসি-র চেয়ারম্যান হতে চলেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করবেন বিধানসভার অধ্যক্ষ।
সোমবার মুকুল রায় ইমেলে পদত্যাগপত্র পাঠান বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত শুক্রবারই বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পর, অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৪১ টি কমিটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দেন। কাজেই অধ্যক্ষের এই পদক্ষেপের পরে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে মুকুলেরও মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর মধ্যেই সোমবার পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করে বিধানসভার অধ্যক্ষকে ইমেল করেন মুকুল রায়। বিধানসভা সচিবালয় সূত্রের খবর, শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন।
এদিকে, একইভাবে খাতায়-কলমে বিজেপি বিধায়ক হলেও, গত বছর ১ অক্টোবর বিজেপি ত্যাগ করেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী এবং পরে তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়ে তিনি জয়ীও হন। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, দেবশ্রী চৌধুরী কোনও কাজ না করলেও, বিজেপি তাঁকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। অন্যদিকে, তাঁর দাবি ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প চালু করেছেন। ভোটের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন সবই পূরণ করেছেন। সেই উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেই তিনি ফের পুরনো দলে ফিরে আসেন।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে জয়লাভ করে বিধায়ক হন মুকুল রায়। একুশের নির্বাচনেই তৃতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে, বিজেপি বিধায়ক হওয়ার পর, নতুন করে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয় মুকুল রায়ের। সখ্যতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, পুত্র শুভ্রাংশু রায় এবং তিনি নিজে ফের তৃণমূলে ফেরেন। পুরনো দলে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, মুকুলকে এই পদের চেয়ারম্যান করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বিজেপি। তবে শিবির বদলের পরও মুকুল রায় ছিলেন পিএসির চেয়ারম্যান। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতে নানা তর্ক, সমালোচনা শুরু হয়। মুকুল রায় কোন রাজনৈতিক দলের, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এর জেরে বিধানসভার সব কমিটি থেকে গণইস্তফা দেন বিজেপি বিধায়করা। এমনকি এদিকে, তৃণমূলের যোগ দেওয়ার পরেও, বিজেপির বিধায়ক পদ ছেড়েছিলেন না মুকুল রায়। এই পরিস্থিতিতে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রাজ্য বিজেপি। তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে কখনও স্পিকার, কখনও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই দু’বার স্পিকার জানিয়েছেন, মুকুল এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন। তাই তিনি বিজেপির বিধায়ক। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। এরপর গতকালই ইস্তফা দিয়েছেন মুকুল রায়। এই পরিস্থিতিতে কে হবেন পরবর্তী পিএসি-র চেয়ারম্যান? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই বিধানসভায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী।
সূ্ত্রের খবর, বিধানসভায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিতে বলেছেন অধ্যক্ষ। কয়েক দিন মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদে তাঁর নাম ঘোষণাও করা হবে। শেষপর্যন্ত কৃষ্ণ কল্যাণীই বিধানসভার পিএসি-র চেয়ারম্যান হন কিনা তা তো সময়ই বলবে। তবে, এই বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর।