বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ কয়েকদিন আগেই বাংলার স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস। এবার প্রথম ভাষণেই বাংলার ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেল তাঁর মুখে। বৃহস্পতিবার নীলরতন সরকার (NRS) মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল অংশ নিয়ে বলেন, বাংলা দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আর ভারত গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার অবদানের কথাও নিজের বক্তব্যের মধ্যে তুলে ধরেছেন।
এদিনের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এছাড়াও আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনও। এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, ‘আমি সাংসদকে বলব, বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে ভারত। আর ভারতকে নেতৃত্ব দেবে বাংলা। একজন দৈত্যের মতো জেগে উঠছে বাংলা।’
শুধু বাংলাই নয়, বাংলার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে নিয়েও যথেষ্ট আশাবাদী রাজ্যের নয়া রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণ প্রজন্মের উপরেই।’ সেই তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বাংলার আরও উন্নতি এবং গৌরব বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন রাজ্যপাল। আবার এদিন তাঁর বক্তব্যে করোনা পরিস্থিতির কথাও শোনা যায় তাঁর বক্তব্যে। সেই সময় যেভাবে চিকিৎসক, নার্স, এবং সব স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন, তার প্রশংসা করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন ওয়ান ম্যান আর্মি।’
রাজ্যের প্রশংসার পাশাপাশি এদিন নয়া রাজ্যপালের ভাষণে উঠে আসে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাসও। এই মেডিক্যাল কলেজেই প্রথম উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার থেকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে নলজাতক দুর্গার জন্মের ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন বলেও জানান রাজ্যপাল। বাংলাকে নিয়ে রাজ্যপালের মুখে এই প্রশংসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদলের মতপার্থক্য এবং সংঘাত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজভবনকে বিজেপির কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। শুধু তাই নয়, শাসকদলের আরও অভিযোগ ছিল যে, তিনি বিজেপির প্রতিনিধি হেসেবে নির্বাচিত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। যদিও রাজ্যের সেইসব দাবি উড়িয়ে জগদীপ ধনখড় জানিয়েছিলেন, তিনি প্রতি মুহূর্তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে, প্রতিবাদ করবেন। তাঁর সময়কালে রাজভবন এবং নবান্নের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছিল। এখানেই শেষ নয়, এক সময় একটা সময় সোশাল মিডিয়া থেকে ধনখড়কে আনফলো করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি দিল্লিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের কাছে দরবারও করেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। এমনকী, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর রাজ্যপাল হিসেবে ধনখড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপরাষ্ট্রপতি হয়ে দিল্লি চলে যান তিনি।